জার্মানির ভোটাররা তাদের রায় প্রদান করেছেন। এখন ১৬ বছর পর চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের উত্তরসূরি কে হবেন তা নির্ধারণের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের। সরকার গঠনে কী প্রাধান্য পাবে তা নিয়েও চলছে আলোচনা। তবে জার্মানির রাজনৈতিক দলগুলো নানা রঙে বিভক্ত। তাই কোন রঙের সরকার এবার গঠিত হবে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকার গঠনের আশা করা হচ্ছে। যদিও নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ দেশটিতে সরকার গঠনে দীর্ঘ সময় লাগার রেকর্ড আছে। ইউরোপের নেতৃত্ব স্থানে থাকা জার্মানির সরকার ট্রাফিক লাইটের আদলে হবে না কি জ্যামাইকার পতাকার রঙের হবে তা নিয়েও আছে আলোচনা। আবার এই দুই ধরনের সরকার কতোটা সফল হবে তা নিয়েও সংশয় আছে।
দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের লক্ষ্যে প্রাথমিক আলোচনায় আশার আলো দেখলে তবেই জোট গড়ার আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়। সেখানে শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা মিলে অভিন্ন সাধারণ কর্মসূচি রচনার উদ্যোগ নেন এবং মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে দর কষাকষি করেন। কোয়ালিশন চুক্তির খসড়া প্রস্তুত হলে শরিক দলগুলোকে হয় বৃহত্তর নেতৃত্ব অথবা সব সদস্যের সমর্থন আদায় করতে হয়। তারপর চুক্তি স্বাক্ষর হলে সরকার গড়ার পথ প্রশস্ত হয়।
জোট হলে প্রেসিডেন্ট দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে এক জন চ্যান্সেলর মনোনীত করেন। দ্বিতীয়বার চ্যান্সেলর নির্বাচিত করতে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ হলে সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট তৃতীয়বারের মতো চ্যান্সেলর নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন অথবা তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আবার নির্বাচন আহ্বান করতে পারেন। যদিও এমনটি এখন পর্যন্ত ঘটেনি।
জার্মানির আগামী জোট সরকারে যে পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি বা সবুজ দল ও উদারপন্থি এফডিপি দল অন্তর্গত হবে, অঙ্কের বিচারে তা প্রায় নিশ্চিত বলা চলে যাদের দলীয় রং যথাক্রমে সবুজ ও হলুদ। এই দুই দলের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া আপাতত সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু নতুন জোট সরকারের চালকের আসনে শেষ পর্যন্ত কোন দল বসতে পারবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট কিছু দেখা যাচ্ছে না। পার্লামেন্টে আসনের বিচারে সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের সবার আগে সেই সুযোগ পাওয়া উচিত।
কালোতে ঢেকে যাবে ট্রাফিক লাইট! :পরিবর্তন এসেছে। জার্মান ভোটারেরা জানিয়ে দিয়েছেন শেষ মহাজোট সরকারের ক্ষুদ্র আপস দিয়ে আর কাজ হবে না। এখন জলবায়ু পরিবর্তন, ডিজিটালাইজেশন ও জার্মানির প্রয়োজনীয় আধুনিকীকরণের মতো বড় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সময়। এসব কাজ শুধু ছোট দলগুলোর সঙ্গে মিলে করা সম্ভব। পরিবেশবাদী সবুজ দল ও ব্যবসাবান্ধব মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দল ছাড়া এবার কিছু করা যাবে না। সবুজ দলের এবার বেশি ভোট পাওয়ার মানে হচ্ছে জার্মান ভোটাররা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত। সে কারণে জোট সরকার গঠনের আলোচনায় আত্মবিশ্বাস নিয়ে অংশ নিতে পারবে তারা। ব্যবসাবান্ধব দল এফডিপিকেও জোট সরকারের আলোচনায় নিতে হবে। তারা সবুজ দলের কিছু ইচ্ছায় বাগড়া দিতে পারে।
কিন্তু সবুজ ও এফডিপি দলের মতো দুটো দলের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত আলোচনা সহজ হবে না। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন ও করারোপ এই দুটি বিষয়ে ঐ দুই দলের মধ্যে বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ফল করা সিডিইউ/সিএসইউ এবার দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হলেও তারাও নতুন সরকার গঠনের চেষ্টা করতে পারে। এর আগে গত কয়েক দশকে তিনবার এমন ঘটনা ঘটেছে যে, যিনি চ্যান্সেলর হয়েছেন তিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দলের ছিলেন না।