সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কঠোরতার পর ইউটিউবার এবং ব্লগারদের বার্ষিক আয়ের ওপর কর বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে মিশরের সরকার। যেসব ইউটিউবারদের বার্ষিক আয় ৫ লাখ মিশরীয় পাউন্ড বা ৩২ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি তাদের এই কর দিতে হবে বলে এএফপির খবরে জানানো হয়েছে।
দেশটির আরেক কর কর্মকর্তা মুহাম্মদ কেশখ জানিয়েছেন, নতুন সিদ্ধান্ত মানতে ব্যর্থ হলে কর ফাঁকি আইন লঙ্ঘনের অপরাধে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। এদিকে অনলাইনে কন্টেন্ট নির্মাতাদের ওপর কর ধার্যের এই পরিকল্পনা দেশটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন এই কর আরোপকে সমর্থন জানিয়েছেন।
মিশরীয় এক নাগরিক টুইটারে বলেন, দরিদ্র সবজি বিক্রেতাকে যদি কর দিতে হয়, তাহলে আমরা ধনীদের ওপরও কর আরোপ করতে পারি। আরেকটি টুইটে বলা হয়, আমি যদি ইউটিউব বা টিকটকে, কিংবা অন্য কোনো সাইট থেকে ৫ লাখ পাউন্ড আয় করতাম, তাহলে কর দিতে আমার কোনো সমস্যা হতো না। এ নিয়ে এতো শোরগোল করার কী আছে!
হাসান হেইকাল নামে আরেক ব্যবহারকারী টুইটে বলেছেন, গুগল, ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদিতে কর আরোপ করা সঠিক। কারণ তারা কর না দিয়েই মিশরের ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন ও তথ্য বাবদ অনেক অর্থ উপার্জন করে। অপরদিকে, অন্যরা দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ইন্টারনেট ব্যক্তিত্বের ওপর কর চাপানোর কোনো অধিকার মিশরীয় সরকারের নেই। ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যের দিকে ইঙ্গিত করে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এক টুইটে বলা হয়, সরকার যদি ইউটিউবারদের কাছ থেকে কর নিতে চায় তাহলে অন্তত আমাদের উন্নত ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং সীমিত গিগাবাইট প্যাকেজগুলো বাতিল করতে হবে।
একজন ব্যবহারকারী করের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ইউটিউব চ্যানেলে কর আরোপ এবং ইন্টারনেট থেকে লাভের বিষয়টি খুবই বিরক্তিকর। আমি কেন এমন কিছুর জন্য কর দেব যেখানে রাষ্ট্র সে ব্যাপারে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা করে না হঠাৎ যদি আমার ইউটিউব চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমাকে কে সাহায্য করবে এমন অনেক লোক আছে যারা লাখ লাখ টাকা উপার্জন করে, সরকার তাদের কাছ থেকে কর নিক। কিন্তু এই চ্যানেলের কোনো জমি নেই, জায়গা নেই, এমনকি এটি রাষ্ট্রের কোনো ভূমিও দখল করছে না।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ভিডিও-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবের ওপর কর আরোপ করেছে। যা প্রকারান্তরে ইউটিউবারদের কাছ থেকেই নেওয়া হয়। কেউ কেউ এদিকে ইঙ্গিত করে মিশরের কর আরোপের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে দাবি করেছেন। আহমেদ আবদেল ফাতাহ নামে এক ব্যবহারকারী বলেন, এই বিষয়টি একটি আইনি সমস্যা তৈরি করবে, কেননা ইউটিউব এরই মধ্যে ইউটিউবারদের কাছ থেকে কর নিয়েছে। তাহলে তারা কেন আলাদা করে মিশরের জন্য কর দেবে।
অনেকে আবার করের অর্থ যেন জনগণের উপকারে ব্যবহার করা হয় সেদিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। তারা বলেন, যদি সরকার ইউটিউবার এবং ইন্টারনেট ব্যক্তিত্বদের ওপর কর আরোপ করে, তাহলে ইন্টারনেটের মান উন্নত করা তাদের ন্যূনতম কর্তব্য। তথ্যসূত্রে জানা যায়, মিশরে সোশ্যাল মিডিয়া অত্যন্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কোন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে হাজারের হাজারের বেশি অনুসারী থাকলে দেশটির আইন সেটি পর্যবেক্ষণে রাখার অনুমতি দেয়। সাইবার অপরাধ আইন ব্যবহার করে দেশটির কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে অনলাইনে ‘অনুপযুক্ত’ কনটেন্ট নির্মাণের দায়ে অনেককেই জেল ও জরিমানার শাস্তি দিয়েছে।