রাজধানীর বাড্ডায় পুলিশ সার্জেন্টের অব্যাহত মামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে এক মোটরবাইক রাইড শেয়ারিং চালক নিজের মোটরসাইকেলটি পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়েছে। আজ সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডে এ ঘটনা ঘটে। মোটরবাইক চালক শওকত আলম সোহেল করোনাকালের আগে ছিলেন ব্যবসায়ী। আয় ভালো হওয়ায় ছিলো সুখের সংসার। কিন্তু করোনার ছোবলে অন্য হাজারো ব্যবসায়ীর মতো ধস নামে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে কেনেন একটি মোটরসাইকেল।
রাইড শেয়ারিং অ্যাপস পাঠাও এর মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করে শুরু হয় নতুন জীবনযুদ্ধ। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ বারবার মামলা দেয়ায় হয়ে ওঠেন তিক্ত-বিরক্ত। শেষমেশ সোমবার সকালে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় আবারো সার্জেন্ট মামলা দিতে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে জীবীকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন বাইকটিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন সোহেল। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়। বাইক আগুনে পেড়ানোর ভিডিও এক পথচারী ফেসবুকে শেয়ার করলে মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। মানুষ কতটা বিরক্তির পর্যায়ে পৌছালে এমনকি করতে পারে সে বিষয়েই বেশি মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা।
এদিকে, বাইকে আগুন দেয়ার ঘটনাকে মর্মান্তিক উল্লেখ করে পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে মঙ্গলবার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপ-বেইজড ড্রাইভারস ইউনিয়ন অব বাংলাদেশ (ডিআরডিইউ)। রাইড শেয়ার চালকদের কর্মবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিআরডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ বলেন, হয়রানির জন্য একজন চালক তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনাও যদি পুলিশকে নাড়া না দেয়, তাহলে কি আত্মহুতি দিলে তাদের বিবেক নাড়া দেবে? তিনি বলেন, গাড়ি কোথাও ব্রেক করলেই সেখানেই ধরে ফেলে ট্রাফিক পুলিশ। সরকার আমাদের জায়গা নির্ধারণ করে দিক। তাহলে আমরা যত্রতত্র দাঁড়াবো না।
জানা গেছে, বাইকে আগুন দেয়া চালক সোহেলের বাড়ি কেরানীগঞ্জে। করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে তিনি স্যানিটারি সামগ্রীর ব্যবসা করতেন। এতে তার লোকসান হয়। জীবিকা নির্বাহে শওকত দুই মাস ধরে বাইকে যাত্রী পরিবহন করতেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বাইকে আগুন দিয়ে সোহেল উদভ্রান্তের মতো চিৎকার করছেন। প্রত্যক্ষদর্শী একজন পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। তখন সোহেল এসে তাকেই বাধা দেন। বলেন, কেউ যাবেন না, আপনারা কেউ যাবেন না’ অন্য একজন সোহেলকে বলেন, ভাই মাথা ঠান্ডা করেন।
বাড্ডা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবু সাঈদ মিয়া বলেন, ওই রাইডার আইন অমান্য করায় বাড্ডা লিংকরোড এলাকায় কর্তব্যরত সার্জেন্ট বাইকের কাগজ দেখতে চান। আইনগতভাবে এটা ওই সার্জেন্টের দায়িত্ব। কাগজ চেক করার সময় হুট করেই নিজের বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন সোহেল। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়। প্রাথমিকভাবে সোহেল জানিয়েছেন, তিনি মোটরসাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করেন। তার মোটরসাইকেলের কাগজ ঠিক থাকার পরেও বার বার মামলা দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। চলতি মাসেও পল্টনে একবার মামলা দেয়া হয়। তাই রাগে ক্ষোভে বাইকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সার্জেন্ট মামলা দেননি বলে জানতে পেরেছি। তবুও সোহেল ও ওই সার্জেন্টকে থানায় এনে বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হয়। সোহেল বারবার নিজের ক্ষোভের কারণে এমনটা ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।