এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। আসামিরা বর্আমানে এই ঘটনায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী একাধিকবার জামিন আবেদন করলেও আদালত তা নামঞ্জুর করেছেন।
আলোচিত ঘটনার দুটি মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তাছাড়া উচ্চ আদালতের আদেশে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনের দুই মামলার বিচার কার্যক্রম দুটি আদালতের পরিবর্তে একই আদালতে চলবে। ফলে নতুন করে মামলার অভিযোগ গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি আদালতে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার বিচারকাজ একসঙ্গে শুরু করার আবেদন করেছিলেন বাদীপক্ষ। শুনানি শেষে বিচারক আবেদনটি খারিজ করলে বাদীপক্ষ মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম একই আদালতে সম্পন্নের জন্য ওই মাসেই উচ্চ আদালতে একটি ফৌজদারি বিবিধ মামলা করেন। পরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম একসঙ্গে একই আদালতে সম্পন্নের আদেশ দেন।
এ ঘটনার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শহিদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, কয়েক মাস আগে মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনের দুটি মামলার বিচার একই সঙ্গে একই আদালতে হবে। ফলে দুই মামলায় নতুন করে অভিযোগ গঠন করা হবে।
সংঘবদ্ধ গণধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের দুটি অভিযোগপত্র দেওয়ায় বাদীপক্ষের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এজন্য বাদীপক্ষ উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়। আগামী ১৩ অক্টোবর মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ রয়েছে। তবে ওই দিন কোন আদালতে অভিযোগ গঠন করা হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।
২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এমসি কলেজের মূল ফটক থেকে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় রাতেই ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করে শাহপরান থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ অস্ত্র আইনে আরও একটি মামলা দায়ের করে।
পুলিশের তদন্তে আট আসামির মধ্যে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, মিজবাহুল ইসলাম রাজন ও আইনুদ্দিন ওরফে আইনুলের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট। এ ঘটনায় রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমের সহযোগিতার বিষয়টি তদন্তে উঠে এসেছে। ওই বছরের ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এতে ৫২ জনকে সাক্ষী রাখা হয়।
এদিকে, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ ও হোস্টেল সুপার জীবন কৃষ্ণ আচার্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ২ জুন দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন উচ্চ আদালত। আদেশে বলা হয়, ‘ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের পেছনে মূলত হোস্টেল সুপার ও প্রহরীদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ওই কলেজের অধ্যক্ষও কোনোভাবে ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।’ আইন সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি ছিল কি-না, তা খতিয়ে দেখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। ঘটনার পর এমসি কলেজের ছাত্র সাইফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল ইসলামকে কলেজ কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও এই চারজনের ছাত্রত্ব ও সার্টিফিকেট বাতিল করে।