দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পায়রা সেতু আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতুর উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন উপলক্ষে সেতু পরিদর্শন করেছেন বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
স্বপ্নের এ পায়রা সেতু চালু হলে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে আর ফেরির দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।আগে যেখানে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগত ৬-৮ ঘণ্টা। আর পায়রা সেতু চালু হলে সেখানে সময় লাগবে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টা। এ ফেরীবিহীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে কুয়াকাটা সমুদ্র বন্দরে পর্যটন কেন্দ্রের এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। সেই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচন হবে। এরই মধ্যে পায়রা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলে সরকারের বেশকিছু মেগা প্রকল্প চলমান।
প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকায় নির্মিত এ সেতু অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই চালু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিকালে ওই সেতুর নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি পরিদর্শন করেন বরিশালের বিভাগীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, পায়রা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল হালিম, বরিশাল পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন, পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তারা পায়রা সেতু পরিদর্শন করেন।
পায়রা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল হালিম বলেন, এ সেতু খুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে দেশের সর্ব দক্ষিণে কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে, যা বর্তমান সরকারের একটি নতুন মাইলফলক। তিনি বলেন, পায়রা সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার। এটি চার লেন বিশিষ্ট সেতু। মূল সেতুসহ নদীর উভয় প্রান্তে মোট ১ হাজার ২৬৮ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, টোলপ্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, ইলেকট্রিফিকেশন, সৌন্দর্যবর্ধনসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
২০০ মিটার করে দেশের দীর্ঘতম দুটি স্প্যান বসানো হয়েছে পায়রা সেতুতে। নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশের সর্ববৃহৎ। বিদ্যুতের আলোয় রাতে নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণা হয় পায়রা সেতুতে। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন।
রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে সেতুটির দূরত্ব ১৯২ কিলোমিটার এবং বরিশাল নগরী থেকে ২৭ কিলোমিটার পটুয়াখালীর লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর সবশেষ সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (কেএফএইডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওএফআইডি) যৌথ অর্থায়নে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেড। কার্যাদেশে সেতু নির্মাণে ৩৩ মাস সময় বেঁধে দেয়া হলেও দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। তবে এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই যান চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে।