প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষকে পর্যাপ্ত টিকা প্রদানের লক্ষ্যে ৮০ ভাগ জনগোষ্ঠীকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেশে কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ডিসেম্বর ২০২১-এর মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ ভাগ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেওয়া, ১২ বছর ও তদূর্ধ্ব সব ছাত্রছাত্রীদের টিকার আওতায় নিয়ে আসা এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবন্ধীদের সুবর্ণ কার্ডের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ডা. মো. রুস্তুম আলী ফরাজীর প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীদের প্রশ্নোত্তরপর্ব টেবিলে উত্থাপন করেন স্পিকার।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পরপরই সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা হিসাবে বিনামূল্যে টিকা প্রদানের বিষয়টি সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ লক্ষ্যে করোনার টিকা আবিষ্কার ও ব্যবহারের অনুমতি প্রাপ্তির পূর্ব হতেই আমরা টিকা সংগ্রহ ও টিকা প্রদানের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ডা. মো. রুস্তুম আলী ফরাজীর ওই প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ও সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকার দেশের সব মানুষকে টিকার আওতায় আনতে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ভ্যাক্সিনেশন প্ল্যান (এনডিবিপি) প্রস্তুত করেছে, যা কোভ্যাক্স কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে জনসাধারণের জন্য টিকা গ্রহণের বয়সসীমা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশে ২৫ বছর তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীকে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমান টিকাদান কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব শিক্ষার্থীকে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে বয়সসীমা ১৮ বছর পর্যন্ত কমানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের গৃহীত এসব কার্যক্রমের ফলে এ পর্যন্ত (১২ সেপ্টেম্বর) ২৪ কোটি ৬৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৬০ ডোজ টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দ্বিপক্ষীয় ক্রয় চুক্তি এবং উপহার হিসাবে মোট ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৩১ হাজার ৮৮০ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা সংগ্রহ ও বিনামূল্যে টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ৩ কোটি এবং চীনের সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে ৭ কোটি ৭০ লাখ ডোজ টিকা ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়াও রাশিয়া থেকে ১ কোটি ডোজ চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ৩ কোটি সিনোফার্ম ও ৭ কোটি ৫০ লাখ ডোজ সিনোভ্যাক টিকা কেনার চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতি মাসে যাতে এক কোটির বেশি টিকা পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিনোফার্ম হতে প্রদত্ত সিডিউল অনুযায়ী অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে দুই কোটি হিসাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ কোটি টিকা পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, চলমান টিকা কার্যক্রম জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ইতোমধ্যে সব বিভাগীয় সদর, জেলা সদর, উপজেলা সদরে অবস্থিত ৬৭৩টি কেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণকে টিকা প্রদান করা হচ্ছে। আশা করি পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টিকা প্রদান করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকার মজুত ও সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে বলেন, মহামারি করোনা প্রতিরোধের কল্পে এ পর্যন্ত (১২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ২ কোটি ৯ লাখ ২২ হাজার ৭১৫ জনকে প্রথম ডোজ এবং ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৪৬ জনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। সর্বমোট ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৬১ জনকে টিকা প্রদান করা হয়েছে।
তাছাড়া ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মজুত ভ্যাকসিনের পরিমাণ হচ্ছে ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার ১১৯ ডোজ। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ অতিমারি এখনো চলমান রয়েছে। আমরা আশা করি, সবার সহযোগিতায় চলমান এ ভাইরাসটিকে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হব। পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। এজন্য টিকা গ্রহণের পাশাপাশি সবাইকে নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আবারও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানান।