লিটন মিয়া, এইচএসসি পাস করে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে সেখান থেকে চাকরিচ্যুত হন। পরে ইরাকে চলে যান। ইরাকের রাজধানী বাগদাদের একটি হাসপাতালে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পদে চাকরি ও ঢাকা মেডিকেল থেকে পাস করা ডাক্তার বলে নিজেকে পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ে বিয়ে করতেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে ইরাকে নিয়ে যেতেন। এরপর সেখানে বিক্রি করে দিতেন। বিক্রির পর আবার দেশে এসে নতুন করে বিয়ে করতেন। এভাবে বিভিন্ন এলাকায় ছয়টি বিয়ে করেন। এর মধ্যে তিনি পাঁচ নারীকে ইরাকে নিয়ে বিক্রি করেছন। এ কাজে তাকে বেশ কয়েকজন সহযোগিতা করতেন।
শনিবার সকালে রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে অভিযান চালিয়ে নারী পাচারকারী সিন্ডিকেটের হোতা লিটন মিয়া ও তার সহযোগী আজাদকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, বিয়ার, বিদেশি জাল মুদ্রা, পাসপোর্ট ও বিভিন্ন ধরনের সিল উদ্ধার করা হয়। পরে বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মানবপাচার করতো। দেশে-বিদেশে এদের ১৫-২০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। পুরুষদের পাশাপাশি চক্রটি নারীদেরও পাচার করে থাকে। বিভিন্ন পেশায় দক্ষ নারী যেমন নার্স, পার্লারকর্মী ও বিক্রয় কর্মীদের টার্গেট করতো। চক্রটি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারে উচ্চ বেতন চাকরির প্রলোভন দিয়ে ভিকটিমকে আকৃষ্ট করতো। প্রতারণার কৌশল হিসেবে চক্রের মূল হোতা লিটন নিজেকে ঢাকা মেডিকেল থেকে পাস করা এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয় দিতো।
এছাড়া ইরাকের রাজধানী বাগদাদের একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে কর্মরত বলে পরিচয় দিতো। তার সহযোগী গ্রেফতারকৃত আজাদ একটি এজেন্সির আড়ালে নারী পাচারের সঙ্গে যুক্ত। ভিকটিমদের প্রথমে বাংলাদেশ হতে টুরিস্ট ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে নেওয়া হতো। অতঃপর ওই দেশে কয়েকদিন রেখে টুরিস্ট ভিসায় ইরাকসহ অন্যান্য দেশে পাচার করতো। তারপর সুবিধাজনক সময়ে ভিকটিমদের বিক্রি করে দেওয়া হতো। এভাবে চক্রটি ২০০ থেকে ২৫০ জনকে পাচার করেছে। এর মধ্যে ৩৫-৪০ জন নারী রয়েছে। বিদেশে নেওয়ার জন্য ভিকটিমদের কাছ থেকে ৩-৪ লাখ টাকা নেওয়া হতো।