দিনমজুর আয়নাল হক ও জামিরন বেগম দম্পতিকে একঘরে রাখার ঘটনায় করা মামলায় মো. সহিদ আলী ও আমির চান নামের দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের ছলিমনগর এলাকায়।
৩১ আগস্ট মঙ্গলবার পঞ্চগড়ের আদালতে দুপুরে মো. সহিদ আলী ও আমির চান নামের দুই আসামি হাজির করা হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। জানা গেছে, মো. সহিদ আলী ও আমির চান জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের ছলিমনগর এলাকার ছমির আলীর ছেলে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জামাল হোসেন জানান, দিনমজুর দম্পতিকে একঘরে রাখার ঘটনায় করা মামলায় ৯ আসামির মধ্যে দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। দেবীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন মঙ্গলবার ভোর রাতে সহিদ ও আমির চানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের দুজনকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেবীগঞ্জ আমলি আদালতে হাজির করা হলে বিচারক এম এম মাহবুব ইসলাম তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, ঝগড়া-বিবাদের এক পর্যায়ে আয়নাল হক ও তার স্ত্রী জমিরন বেগম দম্পতি একে অপরকে তিন তালাক দিয়েছিলেন। পরে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অন্য কাজি অফিসে নিকাহ রেজিস্ট্রার গিয়ে আবার বিয়ে করে সংসার করছেন তারা। কিন্তু বাদ সাধেন সমাজপতিরা। তাদের এ বিয়ে মেনে না নিয়ে উল্টো ফতোয়া জারি করে তাদের এক ঘরে করে রেখেছিলেন তারা। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী জমিরন নেছা ৯ আগস্ট দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রত্যয় হাসানের বরাবর ১০ সমাজপতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এরই প্রেক্ষিতে দীর্ঘ তিন মাস সমাজচ্যুত হওয়ার পর অবশেষে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছেন আয়নাল হক ও জমিরন বেগম দম্পতি। তাই ১২ আগস্ট বিকেল থেকে ওই দম্পতি তাদের নিজ বাড়িতে একসঙ্গে বসবাস করতে শুরু করেছেন। তাদের বাড়িতে আসতে শুরু করেছে পরিবারের সদস্য, পাড়া- প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন।
কিন্তু ১১ আগস্ট পঞ্চগড় অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মতিউর রহমান স্বতপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি আমালে নিয়ে দেবীগঞ্জ থানার ওসিকে ২২ আগস্টের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন। পরে ওসি মো. জামাল হোসেন ওই দিন আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে ২২ আগস্ট দেবীগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক এম এম মাহাবুব ইসলাম এ ঘটনায় জড়িত সমাজপতি শাহাজাহান আলী, মুফতি আনোয়ার হোসেন, নাসির উদ্দিন, আমির চাঁদ, শহীদ, ছোরমান আলী, জুল হক, মো. মোস্তফা ও মো. রাসেলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।