নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুম হওয়া পরিবারের কষ্ট বোঝেন কি-না তা জানতে চাই। যদি কষ্টই বোঝেন, তবে একটা মানুষ ৮-১০ বছর ধরে তার প্রিয়জনের খোঁজ পাবে না কেন? যে সরকার এখন ক্ষমতায়, তারা হৃদয়হীন। ৩০ আগস্ট সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে মায়ের ডাক আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দুঃখের বিষয়— প্রিয়জনের খবর দেওয়ার পরিবর্তে এ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ দেশে গুম হয় না। ওরা নিজেদের দুঃখে-কষ্টে, পাওনাদারের চিন্তায় অন্য কোথাও চলে যায়। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিটি ৩৪ জনের তালিকা দিয়ে বলেছে তাদের খোঁজ চাই। ওরা (সরকার) খোঁজ দিতে পারেনি। পারেনি বলতে তারা জানে কিন্তু সেটা বলার মতো নয়। সেটা বললে এ সরকার থাকে না, এ দেশ থাকে না, এ রাষ্ট্র থাকে না। এতো বড় হৃদয়হীন পাষণ্ড এরা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে কি এগুলো পৌঁছায় না- প্রশ্ন করেন তিনি।
মানুষকে ভোলানোর জন্য এখন আমাদের কাছে ট্রামের গল্প বলা হচ্ছে। গত দুইদিন ধরে ঢাকা মহানগরে শুধু মেট্রোরেলের কাজ চলছে। আমি এর বিপক্ষে না, কিন্তু আমি কি জিজ্ঞেস করতে পারি- আগামী সাতদিনের মধ্যে টিকা আসবে কি-না? কতদিনের মধ্যে দেশের ১২ কোটি মানুষকে টিকা দিতে পারবেন? পদ্মা সেতু মেট্রোরেল করতে পারবেন কিন্তু টিকা আনতে পারবেন না, ওই উন্নয়ন দেশের মানুষের জন্য চলবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আপনি উন্নয়নের কথা বলবেন আর ঘর থেকে ডেকে নিয়ে মানুষ গুম করে ফেলবেন, খবরও দেবেন না, ওই রকম রাষ্ট্র আমরা চাই না। সত্যি সত্যি যদি আপনাদের হারিয়ে যাওয়া মানুষের খোঁজ চান তাহলে আমরা খোঁজ দিতে সরকারকে বাধ্য করবো। সেজন্য যে কর্মসূচি দেওয়া লাগবে আমরা দেব। সব মানুষকে এক করেন তারপর আমরা প্রেস ক্লাব থেকে বের হয়ে রাস্তায় বসে পড়বো।
অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘উনার (প্রধানমন্ত্রী) উচিত পদ ছেড়ে দিয়ে ওনার বোন রেহানাকে এনে আরও লোকজন দিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, তার পিতার মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের লোকজন কাঁদে নাই, যতটা না আমরা কেঁদেছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা আপনি বোঝেন। তাই দ্রুত গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, গুম একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। এই অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। বাংলার মাটিতে গুমের বিচার হবেই।
বিভিন্ন সময় গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন। গুমের শিকার হওয়া প্রিয় মানুষের ছবি বুকে নিয়ে তারা আলোচনা সভায় অংশ নেন। এ সময় স্বজনরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে সরকার ও প্রশাসনের কাছে গুম হওয়াদের ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।