করোনায় ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করার জায়গা পাচ্ছে না। এজন্য অনুৎপাদনশীল অনেক খাতে টাকা ঢালছে ব্যাংকগুলো। মূলত, তহবিল ব্যবস্থাপনার খরচ উঠাতে কিংবা বাড়তি লাভের আশায় ব্যাংকগুলো এ কাজ করছে, যা ব্যাংকের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার অলস টাকা বেশি থাকায় সে টাকার অপব্যবহারও হতে পারে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এবার শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ তথ্য তদারকির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে মুদ্রাবাজারের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে জানাতে হবে। এমনকি ব্যাংকগুলোর নিজস্ব ও সাবসিডিয়ারিসহ দৈনিক কোথায় কী পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে, তা-ও জানাতে হবে। প্রতি কার্যদিবসের তথ্য বিকাল ৫টার মধ্যে পাঠাতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়ে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, করোনা সংক্রমণের প্রভাব মোকাবিলায় সরকারি প্রণোদনার আওতায় কম সুদের ঋণের একটি অংশ অন্য খাতে চলে যাচ্ছে। যেমন, শেয়ারবাজার, জমি, ফ্ল্যাট কেনাসহ অনুত্পাদনশীল খাতে যাচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য পেয়েছে। এ কারণে গত ২৫ জুলাই সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়। এছাড়া প্রণোদনার আওতায় ঋণের ব্যবহারসহ বিভিন্ন তথ্য চেয়ে পরবর্তী সময়ে আরো একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঋণের সঠিক ব্যবহার যাচাইয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সর্বশেষ দৈনিক ভিত্তিতে মুদ্রাবাজারে লেনদেন ও বিনিয়োগের তথ্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, মুদ্রাবাজারে দৈনিক লেনদেনের তথ্য সংযুক্ত ছক অনুযায়ী পাঠাতে হবে। দৈনিক ভিত্তিতে বিকাল ৫টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগে এ তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিদিনের নিজস্ব বিনিয়োগের তথ্য পাঠাতে হবে। যেখানে নতুন বিনিয়োগ, মোট বিক্রয়মূল্য (সেল ভ্যালু) ও নেট এক্সপোজার পাঠাতে হবে। প্রতিদিনের মার্জিন ঋণের পরিমাণ, স্থিতি ও সমন্বয় জানাতে হবে। এছাড়া নিজস্ব ও সাবসিডিয়ারিতে প্রতিদিনের ঋণসীমা, তহবিল ছাড়, তহবিল সমন্বয় এবং নেট এক্সপোজারের তথ্য দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে একবারে অলস পড়ে আছে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করবে সে বিষয়ে উপায়ান্তর করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ফলে অনুত্পাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করার মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ব্যাংকগুলো।