রোববার (৮ আগস্ট) বনানী কবরস্থানে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কাদের। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এসময় তিনি বলেন, ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের সহযোদ্ধা। পর্দার অন্তরাল থেকে সঙ্কটে-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা, শক্তি ও সাহস দিয়েছেন বেগম মুজিব।’ ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘বিশ শতকের অন্যতম সেরা বাঙালি নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বঙ্গমাতাই এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেপথ্যের অন্যতম কারিগর ছিলেন।’
বঙ্গমাতা ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল রেণু। বাবার নাম শেখ জহুরুল হক ও মায়ের নাম হোসনে আরা বেগম। এক ভাই-দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তিনি জাতির পিতার হত্যাকারীদের হাতে নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণ করেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দিবসটিতে সরকারি কর্মসূচি ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ লড়াই ও সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। এ লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনের নেপথ্যে প্রেরণাদাত্রী ছিলেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিনি বঙ্গবন্ধুর গোটা রাজনৈতিক জীবন ছায়ার মতো অনুসরণ করে তার প্রতিটি কাজে প্রেরণার উৎস হয়ে ছিলেন। বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন বারবার পাকিস্তানি শাসকদের হাতে বন্দি জীবনযাপন করছিলেন, তখন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কাছে ছুটে যেতেন। তিনি তাদের বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিকনির্দেশনা পৌঁছে দিতেন এবং লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জোগাতেন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কিছু কুচক্রি স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল, তখন প্যারোলে মুক্তির বিপক্ষে বেগম মুজিবের দৃঢ়চেতা অবস্থান বাংলার মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল। স্বামী বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছায়ার মতো অনুসরণ করা বেগম মুজিব জীবনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন, এজন্য অনেক কষ্ট-দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাকে।এ দেশের মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে বেগম মুজিব যে কর্তব্যনিষ্ঠা, দেশপ্রেম, দূরদর্শী চিন্তা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তার ফলে জাতির পিতার পাশাপাশি তিনি আজ বঙ্গমাতার আসনে অধিষ্ঠিত। এ দেশের রাজনীতিতে তার অনন্য সাধারণ ভূমিকা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ মহীয়সী নারী ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সপরিবারে খুনিচক্রের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে শহীদ হন।