দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। বৃদ্ধি পেয়েছে এর উত্পাদন ক্ষমতাও। তবে উত্স জ্বালানি গ্যাস স্বল্পতার কারণে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার অর্ধেকও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। গ্যাস-সংকটের কারণে ডিজেলের ব্যবহার বাড়িয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আর ডিজেলের ব্যবহার বাড়ানোর ফলে চলতি অর্থ বছরে বিদ্যুত্ উত্পাদনে ভর্তুকি সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে। বিদ্যুৎ বিভাগ এবং পিডিবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দেশে বিদ্যুত্ উৎপাদনে সবচেয়ে কম খরচ হয় পানি বিদ্যুতে। এর পরে বেশি খরচসাপেক্ষ জ্বালানিগুলো যথাক্রমে—কয়লা, গ্যাস, ডিজেল ও ফার্নেস তেল এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে। পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমানে দৈনিক ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। এর বিপরীতে পেট্রোবাংলা সরবরাহ করছে ১২৫-১৩৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এখন গ্যাসের ঘাটতি ডিজেলে পূরণ করতে হবে। এতে খরচ বেড়ে যাবে। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার যে বরাদ্দ রেখেছে তা বাড়িয়ে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে ডিজেলের সরবরাহ বাড়ানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুত্ খাতের জন্য সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা বাজেট সহায়তা (ভর্তুকি) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্যহার থেকে খুচরা মূল্যহার কম হওয়ার কারণে এ ভর্তুকি দেওয়া হয়। দৈনিক ১৩ হাজার ৭৯২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে পিডিবির। সম্প্রতি এক সভায় জানানো হয়, ডিজেল থেকে দৈনিক অন্তত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছয় ঘণ্টা উত্পাদন করা প্রয়োজন। গ্যাস-সংকটের কারণে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে দৈনিক ছয় ঘণ্টা বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। প্রতিদিন বিদ্যুতের পিক আওয়ারে (চাহিদা বেশি থাকার সময়) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত স্টেশনগুলো বন্ধ থাকবে। বিদ্যুকেন্দে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পেট্রোবাংলার দৈনিক গ্যাস রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বিদ্যুেকন্দ গুলোর চাহিদা পূরণে দৈনিক ২ হাজার ২৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দরকার। জ্বালানি ভেদে কেন্দগুলো রেশনিং করে চালালে তা ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়ায়। এর বিপরীতে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়।