ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) বিহীন কোম্পানিগুলো সম্পর্কে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) টাস্কফোর্সের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বিপুল পরিমাণ কোম্পানি খুঁজে বের করাই প্রমাণ করে দেশে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও সুশাসনের ঘাটতি কতটা প্রকট।
সোমবার (২ আগস্ট) এক বিবৃতিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে এমনটাই বলা হয়েছে। তবে সংস্থাটি করের আওতার বাইরে থাকা প্রায় ৮০ হাজার কোম্পানি শনাক্ত এবং চলমান প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
এছাড়া এ বিশাল সংখ্যক কোম্পানি এতদিন কীভাবে কর ব্যবস্থার আওতার বাইরে ছিল এবং এর মাধ্যমে ঠিক কী পরিমাণ কর ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রক্রিয়াগত দুর্বলতা চিহ্নিত ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এনবিআরের করজালের বাইরে থাকা বিপুল সংখ্যক কোম্পানি খুঁজে বের করাই প্রমাণ করে দেশে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও সুশাসনের ঘাটতি কতটা প্রকট। একটি নিবন্ধিত কোম্পানি অর্ধশতাব্দী ধরে ব্যবসা করছে অথচ কখনোই কর দেয়নি। আবার মাত্র দুটি ঠিকানায় ১ হাজার ৪০০ কোম্পানির নিবন্ধন কিংবা একই ব্যক্তি ৪৬ কোম্পানির পরিচালক, কিন্তু টিআইএন আছে মাত্র ৪টির। এসব তথ্য রূপকথার অনিয়ম ও আর্থিক অব্যবস্থাপনাকেও হার মানায়। একদিনে বা রাতারাতি এ বিপুল সংখ্যক কোম্পানি কর ফাঁকি দেওয়ার সংস্কৃতির চর্চা যেমন শুরু করেনি, তেমনি স্বল্পসময়ের ব্যবধানেও তারা এই অনৈতিক সুযোগ গ্রহণ করছে না। করের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের যোগসাজশে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার পাশাপাশি এক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা দ্রুত নিরসন জরুরি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এর দায় সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের। কেননা এক ঠিকানায় শতাধিক কোম্পানির নিবন্ধন দেওয়া হলেও তা চিহ্নিত করার ব্যবস্থা যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতর- আরজেএসসির নেই। তবে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সহযোগিতাকারী একশ্রেণির ‘ল’ ফার্ম এর দায়হীন আচরণ এজন্য সমভাবে দায়ী। আবার ৭৮ হাজারেরও বেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের টিআইএন থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২৬ হাজারের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। এর মধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠানই আবার ভুয়া নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিয়ে বিপুল কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয় আলোচিত হলেও এসব যাচাইয়ে এনবিআরের কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। তাই ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে এখনই কার্যকর কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিগত সংযোগ ও সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সবাই যাতে হয়রানিমুক্ত পরিবেশে সহজ পদ্ধতিতে রাজস্ব কর দেওয়ার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা জরুরি। একইসঙ্গে করের আওতায় আনার চলমান প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাতে হয়রানি বা হেনস্তার শিকার না হয়, সে ব্যাপারেও সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানাই।