বিদায়ের আগে দুর্নীতির ‘বহু রাঘববোয়ালকে ছেড়ে দিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ’, এমন অভিযোগ বিভ্রান্তিমূলক, যা বস্তুনিষ্ঠ নয় বলে দাবি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক পরিচালক আবুল হাসনাত মো. আবদুল ওয়াদুদ স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়। প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে দাখিলের জন্য এফিডেভিট করা হয়েছে।
সোমবার (২ আগস্ট) দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একটি জাতীয় দৈনিকে ‘দুদকে অনুসন্ধান বাণিজ্য’ শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশিত হয় গত ১৪ মার্চ। প্রতিবেদনে বলা হয় ‘বিদায়ের আগে দুর্নীতির বহু রাঘববোয়ালকে ছেড়ে দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তাদের দায়মুক্তি আড়াল করতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন কিছু নিরীহ ও দুর্বল ব্যক্তিকে। সব মিলিয়ে শেষ ৫ মাসে তিনি দুই শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দেন।’
পরে গত ১৬ মার্চ প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের নজরে আনেন সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। শুনানি নিয়ে সংবাদে প্রকাশিত তথ্যের বিষয়ে কমিশনের অবস্থান ব্যাখ্যাসহ ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক কতটি সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি/ফার্ম/ব্যক্তি/স্থাপনাকে অনুসন্ধান/তদন্ত কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তার তালিকা দাখিলের নির্দেশনা প্রদান করেন হাইকোর্ট।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ওই পত্রিকায় যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয়। সংবাদটি বাস্তবতা বিবর্জিত এবং সংবাদে উপস্থাপিত তথ্যসমূহ বস্তুনিষ্ঠ নয়। দুর্নীতি দমন কমিশন উক্ত সংবাদের বিষয়বস্তুর সঙ্গে একমত নয়। সংবাদে যে ৫ মাস সময়কালের উল্লেখ করা হয়েছে সে সময়ে কমিশনের কার্যক্রম অন্যান্য সব সময়ের মতোই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক যথাযথ নিয়ম, আইন ও বিধিবিধান অনুসারে সম্পন্ন করা হয়েছে। এখানে আইন বা বিধির কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সংবাদের প্রথম বাক্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘বিদায়ের আগে দুর্নীতির বহু রাঘববোয়ালকে ছেড়ে দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান…’ এ কথাটি সত্য নয়। কারণ কমিশনের চেয়ারম্যান বা কোনো কমিশনার এককভাবে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি/ছেড়ে দিতে পারেন না…।’
সংবাদে দ্বিতীয় প্যারায় একটি সূত্রের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘ইকবাল মাহমুদ বিদায় নেওয়ার আগে স্বীয় কৃতকর্মের অনেক দালিলিক প্রমাণই যথাসম্ভব নিশ্চিহ্ন করে যান। কিন্তু এ তথ্যটির কোনো সত্যতা কিংবা ভিত্তি নেই।’
এছাড়াও সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কথিত নথিভুক্তি কিংবা অনুসন্ধান সমাপ্তির নেপথ্যে রয়েছে কোটি কোটি টাকার লেনদেন।’ এ বিষয়ে দুদক বলছে, ‘এটি একটি মনগড়া, ঢালাও এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ। যেসব অভিযোগ নথিভুক্তি/পরিসমাপ্তি হয়েছে তা আইনসংগতভাবেই করা হয়েছে।’
এছাড়াও সংবাদে প্রকাশিত বেশকিছু অভিযোগের বিষয়ে প্রতিবেদনে দুদক তাদের ব্যাখ্যা দিয়েছে। দুদক জানায়, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ধারা ৫(১) অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কমিশন মূলত তিনজন কমিশনারের সমন্বয় গঠিত একটি কমিশন। তিনজন কমিশনারের মধ্যে একজনকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। উক্ত আইনের ধারা ১৪ ও ১৫ অনুযায়ী কমিশন তার সিদ্ধান্ত কমিশনের সভায় অথবা নথির মাধ্যমে গ্রহণ করে। কমিশনের সব সিদ্ধান্তই সর্বসম্মতিক্রমে কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়, এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুযোগ নেই। তাই উক্ত পাঁচ মাসে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ডের নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি।’
উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ শেষ পাঁচ মাসে কতজনকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দিয়েছেন তার তালিকা চান হাইকোর্ট। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর বিচারপতি মো নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তাদের নাম, ঠিকানাসহ তালিকা ১১ এপ্রিলের হাইকোর্টে দাখিল করতে দুদককে বলা হয়। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ বন্ধ থাকায় তা জমা দেওয়া যায়নি।