বেনাপোল কাস্টমস হাউস দেশের সর্ববৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ছাড়করণের ক্ষেত্রে ৮ শর্ত জারি করেছে। এর ফলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের অনিয়ম কমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে মনে করলেও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এতে বাণিজ্যে যেমন ধীরগতি নামবে, তেমনি অতিরিক্ত খরচ বেড়ে যাওয়ায় তৃণমূল পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যে আগ্রহ হারাবেন।
বৃৃহস্পতিবার (১০ জুন) বিকালে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত শর্ত জারির অনুলিপিটি বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট ৮টি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে- একটি সুনির্দিষ্ট ও ডিটেইল প্যাকিং লিস্ট (সুনির্দিষ্ট বর্ণনা, মার্কস নম্বর, আর্ট নম্বর,পার্ট নম্বর ও ব্রান্ড নামসহ) এবং সুস্পষ্ট কান্ট্রি অব অরজিন থাকা বাধ্যতামূলক। আমদানিকৃত পণ্য চালানের বিপরীতে দাখিলকৃত বাণিজ্যিক দলিলাদির সঙ্গে ডিটেইল প্যাকিং লিস্ট এবং কান্ট্রি অব অরজিন দাখিল করতে না পারলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
- আমদানিকৃত পণ্য চালানের প্রতিটি প্যাকেজে একের অধিক আইটেম মিশ্রিত অবস্থায় আমদানি করা যাবে না। একটি প্যাকেজে শুধুমাত্র ১টি আইটেম আমদানি করা যাবে।
- এসোটেড গুডসের প্রতি কনসাইনমেন্ট ৫০০ এর বেশি প্যাকেজ আমদানি করা যাবে না।
- একটি পণ্য চালান টু হুইলার ,থ্রি হুইলার ও ফোর হুইলার পার্টস মিশ্রিত অবস্থায় আমদানি করা যাবে না। পৃথক পৃথক পণ্য চালান আমদানি করতে হবে।
- ফেব্রিক্স কিংবা অন্য কোন পণ্যের কমন ঘোষণা না দিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে যেমন: শাড়ি,প্যান্টিং,কটন, সিনথেটিক, ওড়না, সিনিল ভেলভেট ফেব্রিক্স প্রভৃতি নামে ঘোষণা দিয়ে পণ্য চালান আমদানি করতে হবে।
- একই পণ্য চালান ২৫টির অধিক আইটেম আমদানি করা যাবে না।
- সীমান্তে এন্টি পয়েন্টে পণ্য চালান রিসিভ করতে হলে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মালিক কর্তৃক সংশিষ্ট প্রতিনিধিকে প্রদত্ত এনওসি দাখিল করতে হবে।
- আনঅথরাইজড সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট/তাদের প্রতিনিধি/কর্মচারী কাস্টমস হাউজে প্রবেশ এবং আমদানিকৃত পণ্য চালান খালাস কাজে নিয়জিত করা যাবে না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, কাস্টমস কর্তৃক নির্দেশিত শর্তের কয়েকটি যৌক্তিকতা আছে। তবে এর অধিকাংশ শর্ত নিয়ম মেনে আমদানি করতে গেলে এতে বাণিজ্যে যেমন ধীরগতি নামবে তেমনি অতিরিক্ত খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের কারণে এপথে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাবেন অনেক ব্যবসায়ী। বিষয়টি কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ্য থেকে ইতিমধ্যে অবগত করা হয়েছে।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বৈধ নিয়ম মানতে সব ব্যবসায়ীরা বাধ্য। তবে এখানে কয়েকটি শর্ত রয়েছে যা মেনে পণ্য আমদানি করতে গেলে আমদানি খরচ অনেক গুণ বেড়ে যাবে। এতে ছোট-খাট ব্যবসায়ীরা এতো খরচ বহন করে আমদানি করতে পারবেন না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
এসময় তিনি আরও বলেন, এক কনসাইনমেন্টে বিভিন্ন প্রকারের পণ্য ব্যবসায়ীরা আমদানি করলেও সরকারকে যথাযথভাবে রাজস্ব পরিশোধ করা হয়। তবে দুই একজন অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে এমন শর্ত জারি সাধারণ ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি বাড়াবে।
যশোর চেম্বার অব কর্মাসের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, কাস্টমস বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে শর্ত জারি করেছে তা তৃণমূল পর্যায়ের ক্ষুদ্র আমদানিকারকেরা আর ব্যবসা করতে পারবেন না। কারণ এতে কনসাইনমেন্ট প্রতি আনুসাঙ্গিক খরচ দ্বিগুণ হারে বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে দেশীয় বাজারে আমদানি পণ্যের ওপর। তিনি আশা প্রকাশ করেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জারিকৃত কয়েকটি শর্ত পূর্ণ বিবেচনা করবেন।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের ডেপুটি কমিশনার শামিমুর রহমান জানান, ৮ শর্ত মেনে পণ্য আমদানি হলে সরকারের যেমন রাজস্ব আয়ে স্বচ্ছতা বাড়বে তেমনি অনিয়ম অনেকাংশে কমে আসবে। খুব দ্রুত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, দেশে চলমান ১২টি স্থলবন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্ব দাতা বেনাপোল বন্দরের কাস্টমস হাউজ। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। চট্রগ্রাম বন্দরের পর বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। প্রতিবছর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসে। অন্যান্য বন্দর দিয়ে আমদানি বাণিজ্যে ব্যবসায়ীদের নানান বৈধ সুবিধা থাকলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম জারিতে এপথে ইতিমধ্যে অনেক ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ করেছেন। এতে গত কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আয় ব্যাপক হারে কমে এসেছে। তবে নামধারী কিছু অসৎ ব্যবসায়ী বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে রাজস্ব ফাঁকিও দিচ্ছে অভিযোগ রয়েছে।