ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামাস উৎখাত আর তাদের কবল থেকে জিম্মি উদ্ধারের নামে ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছেই। প্রতিদিনই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা; দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের মিছিল। নিরাপদ বলে কোনো স্থান বাকি নেই গাজাবাসীর জন্য। একদিকে আকাশ ও স্থল অভিযান, অন্যদিকে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ; গাজা যেন সাক্ষাৎ নরক হয়ে উঠেছে তার বাসিন্দাদের জন্য।
এরই মধ্যে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘোষণা পর সপ্তাহখানেক ধরে গাজায় আগ্রাসনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল; হামলা ও খাদ্যাভাবে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন শতাধিক ফিলিস্তিনি। এমন পরিস্থিতিতে একের পর এক মিত্র দেশ হাত ছাড়িয়ে নিচ্ছে ইসরায়েলের হাত থেকে। সবশেষ ব্রিটেনের কাছ থেকেও এলো কড়া প্রতিক্রিয়া।
মঙ্গলবার (২০ মে) ব্রিটেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত এবং পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি সেটেলারদের ওপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে লন্ডন। একইদিনে তলব করা হয়েছে ব্রিটেনে নিয়োজিত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকেও। খবর রয়টার্সের।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। আমরা এসময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নীতির সঙ্গে সেটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। তাই, আমি ঘোষণা করছি, ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা স্থগিত করা হলো।
মার্চ থেকেই গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও পানি প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে ইসরায়েল। তাদের অভিযোগ, এসব রসদ লুট করে নিজেদের পুনর্গঠনে ব্যবহার করছে হামাস। তবে, তাদের অভিযোগের তোয়াক্কা না করে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এভাবে চলতে থাকলে গাজায় মারাত্মক দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।
এরপরও গত সপ্তাহে পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে ভূখণ্ডটিতে সামরিক অভিযানের মাত্রা বৃদ্ধির ঘোষণা দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ নিয়ে গত সোমবার প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েল ও নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং কানাডা। নতুন অভিযান বন্ধ না করলে তেল আবিবের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয় এই ত্রয়ী। এছাড়া, অবিলম্বে ত্রাণ অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
পার্লামেন্টের বক্তব্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বৃদ্ধি নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। আমার এই কথা রেকর্ডে রাখতে চাই। আমি সবাইকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জিম্মিদের মুক্ত করতে যুদ্ধবিরতি একমাত্র পদ্ধতি। আমরা আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনে ব্রিটেনের সমর্থন নেই। আমরা আবারও দাবি জানাচ্ছি, গাজায় যেন ত্রাণ সহায়তা বৃদ্ধি করা হয়।