মহামারি করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারত। বিপর্যস্ত দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থাও। এপ্রিল ও মে মাসের তুলনায় দেশটিতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে এলেও চারদিকে হাহাকারের ছবি যেন স্পষ্ট। তবে এর মধ্যেও যেন মন ভালো করে দেওয়ার মতো দৃশ্যে কিছুটা হলেও লাঘব হয় হাহাকারের যন্ত্রণা। তেমনই এক ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক বৃদ্ধ। কাজের সূত্রে ছেলে বাড়ির বাইরে থাকায় তার দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল ছিল পুত্রবধূর কাঁধেই। শ্বশুর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর বেশ কয়েকবার চেয়েও সাহায্য পাননি কারও। ফলে বাধ্য হয়ে শ্বশুরকে কাঁধে চাপিয়ে তিনি রওয়ানা হন হাসপাতালের দিকে।
আলোচিত ওই পুত্রবধূর নাম নীহারিকা দাস। তার বাড়ি আসামের নগাঁও জেলায়। শ্বশুরকে কাঁধে করে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যাওয়ার এই দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, গোলাপি রঙের পোশাক পরিহিত নীহারিকা দাস অবলীলায় এক জনকে কাঁধে চাপিয়ে হেঁটে চলেছেন। পিঠ আঁকড়ে ঝুলে থাকায় বৃদ্ধ ব্যক্তিই তার শ্বশুর। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় ৭৫ বছর বয়সী শ্বশুরকে পিঠে চাপিয়ে ওইভাবেই তিনি হাসপাতালে নেন তাকে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, কর্মসূত্রে আসামের বাইরে থাকেন নীহারিকার স্বামী সুরজ। আর তাই রাজ্যের নগাঁও জেলার ভাটিগাঁওয়ের বাড়িতে ৭৫ বছর বয়সী শ্বশুর থুলেশ্বরের দেখাশোনার পাশাপাশি সংসার সামলানোর কাজ, সব একাই করেন নীহারিকা।
শ্বশুরের জ্বর ও কোভিডের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় নীহারিকা তাকে পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকের সাহায্য চেয়েও পাননি। তাই বাধ্য হয়ে শ্বশুরকে পিঠে নিয়েই তিনি রওনা হন স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্দেশে। সেখানে নমুনা পরীক্ষার পর থুলেশ্বরের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। করোনা শনাক্ত হয় পুত্রবধূ নীহারিকারও।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বৃদ্ধ থুলেশ্বরকে হাসপাতাল ও নীহারিকাকে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হয়। কিন্তু অসহায় শ্বশুরকে একা ছাড়তে রাজি হননি নীহারিকা। বসে থাকেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। শেষ পর্যন্ত সেখানকার চিকিৎসক দু’জনকেই অ্যাম্বুল্যান্সে করে ভোগেশ্বর ফুকনানি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
হাসপাতালে জেনারেল ওয়ার্ড থেকে নিয়ম করে এসে আইসিইউতে ভর্তি শ্বশুরের সেবা করছিলেন নীহারিকা। সেই ভিডিও অবশ্য ভাইরাল হয়েছে। কখনও শ্বশুরকে সাহস দেন। কখনও মজা করেন। কখনও বলেন, ‘এটা আইসিইউ দেউতা (বাবা), ভয় পাবেন না। বুড়ো হয়ে ঢুকেছেন, ডেকা (যুবক) হয়ে বেরোবেন।’
কখনও তাকে বলতে শোনা যায়, ‘দেউতা আপনার কোনো চিন্তা নেই। কাঁদবেন না একদম। আমি তো আছি আপনার ভরসা।’ কিন্তু বৃদ্ধ থুলেশ্বরের অবস্থা আরো খারাপ হওয়ায় শনিবার তাকে গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। সঙ্গে যেতে পারেননি নীহারিকা।
তিনি ভিডিও বার্তায় হাতজোড় করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘শ্বশুরের রক্ত লাগবে শুনছি। তার পাশে কেউ নেই। আমার নিজের শরীর ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। শক্তি শেষ হয়ে আসছে। দয়া করে আমায় গুয়াহাটির একই হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। না হলে তাকে (শ্বশুর) সাহায্যের কেউ থাকবে না।’