স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. জাহিদ মালেক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমসহ সংশ্লিষ্টদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন । তিনি বলেন, ‘তথ্য নেওয়ার জন্য উনি (রোজিনা ইসলাম) ঘরে ঢুকে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেছেন, এটাকে কী বলবেন?’ মঙ্গলবার (১৮ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
রোজিনা ইসলামকে গলা চেপে ধরা হয়েছে কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা এ বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখব। আমরা জিজ্ঞেস করেছি, এ ধরনের শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে কি না? উনি একজন সিনিয়র অফিসার। উনি বলছেন, ‘শারীরিক নির্যাতন আমি (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা) করিনি বরং আমাকেই নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি (সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম) আমার গায়ে খামচি দিয়েছেন, আমাকে থাপ্পড় দিয়েছেন। আমরা তো তাকে শুধু আটকানোর চেষ্টা করেছি। তারপর তো পুলিশই চলে এসেছিল। এরপর পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।’ এ কথাগুলো উনারা আমাকে বলেছেন। পরবর্তী সময়ে এটা নিয়ে যখন আরও আলোচনা হবে, তখন তো সত্য বেরিয়ে আসবে।’’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (রোজিনাকে) শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে এ কথাটা কিন্তু সঠিক নয়। একজন অতিরিক্ত সচিব ও দুইজন উপসচিব পদমর্যাদার নারী ওই সময় উপস্থিত ছিলেন। তারাই প্রাথমিকভাবে রোজিনার সঙ্গে ডিল করেছেন। পরবর্তীতে যখন দেখা গেল রাষ্ট্রের সিক্রেটের বিষয় আসছে, তখন পুলিশকেও ডাকা হয়েছিল। এই বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা তো আপনাদের সঙ্গে কো-অপারেট করেই কাজ করছি।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মতে এই ধরনের ঘটনার তো দরকার ছিল না। ওখানে এটা নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না বা ঢোকার কোনো প্রয়োজন ছিল না। ঘটনা এতটুকুই আমি জানি। কারণ আমি তো তখন ওইখানে উপস্থিত ছিলাম না। আমি বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে এগুলো জেনেছি।’
২০১১ সালের আইন থাকতে প্রায় ১০০ বছর আগের আইনে কেন রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো আর আইন বিশেষজ্ঞ নই। উনি যে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করেছেন সেই প্রতিবেদনের জন্য আজকের এ ঘটনা নয়। আজকের ঘটনার ওপরই আপনাকে কথা বলতে হবে। ওইখানে একজন লোক সরকারি ডকুমেন্ট নিয়ে যাচ্ছে, ফাইলসহ নিয়ে যাচ্ছে, ছবি তুলছে এগুলো রাষ্ট্রীয় সিক্রেট ডকুমেন্ট, এগুলো টিকা সংক্রান্ত যেসব নথি বাইরে প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেগুলো যদি কেউ নেয়, তাহলে আমরা কী করতে পারি? আর এই আইনের বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে পারবো না। কারণ আমি এখনও ওখানে যাইনি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফাঁকা রুমে ফাইল রাখা ছিল। উনি খালি রুমে ঢুকছেন। সেটা যদি ফাঁদে ফেলা হয়, কেউ যদি অন্যায় করে সেটাতো সামনে বেরিয়ে আসবে। কেউ যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটাও আমি বলছি, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে যদি কেউ অন্যায় করে থাকে তাহলে সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘টিকার সংকট দেখা দিয়েছে, সেই টিকা নিয়ে আমরা দিনরাত পরিশ্রম করছি। চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এগ্রিমেন্ট পর্যায়ে চলে গেছে। সেই জিনিসগুলো যদি কেউ নিতে চায় বা প্রকাশ করতে চায় তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাবে। কেননা ওই সব দেশগুলো আমাদের সঙ্গে আর কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখবে না। কারণ ওই দেশগুলোর সঙ্গে সেভাবেই চুক্তি করেছি আমরা।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে ছয় ঘণ্টা তাকে আটকে রাখা হয়নি। আধা ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ ডাকা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও জানেন। তিনি তো আমার আগেই এ ঘটনা জানতেন। হয়ত রোজিনা ইসলাম পুলিশকে সহযোগিতা করছিলেন না। যদি কর্মকর্তারা উনাকে শারীরিক নির্যাতন করে থাকেন, তাহলে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া যদি রোজিনা ইসলাম অপরাধ না করে থাকেন তাহলে তো আইনের মাধ্যমে সেটার প্রমাণ হয়ে যাবে। এগুলো সবই রাষ্ট্রের কাজ। এখানে কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশ নেই।’