দীর্ঘদিন পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কোনো জনসভায় ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৪ ডিসেম্বর নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে এই জনসভা হবে। এই কর্মসূচি ঘিরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। জনসভায় অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে প্রায় পাঁচ লাখ লোকের জনসমাগম ঘটাতে চায় ক্ষমতাসীন দল।
সম্প্রতি বিভাগীয় পর্যায়ে জনসমাবেশ করছে বিএনপি। সেই ধারাবাহিকতায় গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামেও জনসভা করেছে দলটি। সেখানে অনেক বাধা-বিপত্তির পরও বড় জমায়েত ঘটাতে সক্ষম হয় বিএনপি। একই মাঠে কাছাকাছি সময়ে জনসভা ডেকেছে ক্ষমতাসীন দল। এজন্য এই কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। বিএনপির চেয়ে বেশি লোক সমাগম ঘটানোর টার্গেট নিয়েছে দলটি।
চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এই জনসভার আয়োজন করছে। এই জনসভা সফল করতে নেতাকর্মীরা রাত-দিন কাজ করছেন। চলছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। দফায় দফায় যৌথ প্রতিনিধি সভা করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
গত ৯ নভেম্বর চট্টগ্রামে এক সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘চট্টগ্রামে পলোগ্রাউন্ডের জনসমাবেশ জনস্রোতে রূপ নেবে। চট্টগ্রাম জেলার সব উপজেলা-ইউনিয়ন, মহানগরের ৪১ ওয়ার্ডের সব ইউনিটের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে হাজির থাকতে হবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪ ডিসেম্বরের চট্টগ্রামের জনসভার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের অতীতের সকল জনসভার রেকর্ড গড়তে চাই। এই জনসভাকে আমরা জনসমুদ্রে পরিণত করব।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের গৌরবময় ভূমিকা আছে। চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজের কাঁধে নিয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারও হয়তো চট্টগ্রামবাসীকে নিরাশ করবেন না। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্বাগত জানাতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা করতে আমরা তৎপরতা চালাচ্ছি। আওয়ামী লীগ ছাড়াও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পৃথক পৃথক প্রস্তুতি সভা করে জনসভা সফল করতে কাজ করছে।’
জনসভা ঘিরে ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে বন্দরনগরী। অনেক ক্ষেত্রে রাস্তার মোড়ের ট্রাফিক সংকেতবাতি, সড়কদ্বীপ, বাঁকও ঢেকে গেছে পোস্টার–ব্যানারে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহসভাপতি ও সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম, সহসভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বর্তমান সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ বিভিন্ন নেতার নামে পোস্টার ও ব্যানার টাঙানো হয়েছে।
এদিকে পলোগ্রাউন্ডে নৌকার আদলে তৈরি হচ্ছে ১৬০ ফুট দৈর্ঘের মঞ্চ। যেখানে একসঙ্গে ২০০ অতিথি বসতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ প্রচারে পলোগ্রাউন্ড ও আশপাশের এলাকায় লাগানো হবে ঢাকা থেকে আনা ‘কলরেডি’র ১৫০ মাইক।
মঞ্চ তৈরির কাজে নিয়োজিত সাহাবুদ্দিন ডেকোরেটার্সের স্বত্বাধিকারী মো. সাহাবউদ্দিন বলেন, নৌকার আদলে ১৬০ ফুট দীর্ঘ মঞ্চটি তৈরির কাজ চলছে। মঞ্চের মাঝখানের ৪০-৮০ ফুটের মধ্যে ২০০ অতিথি বসবেন। মঞ্চের উচ্চতা হবে সাত ফুট। এছাড়াও মঞ্চের সামনে মুক্তিযোদ্ধা, ভিআইপি ও মহিলাদের বসার জন্য পৃথক প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে।
২০১২ সালের ২৮ মার্চ পলোগ্রাউন্ড মাঠে সর্বশেষ আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১০ বছর পর একই মাঠে আবারও ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এজন্য এই জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন।