হেফাজতে ইসলামকে স্বাধীনতাবিরোধী, জঙ্গি, মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী উল্লেখ করে ধর্মের নামে সন্ত্রাসের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সম্প্রতি হেফাজতের দেশব্যাপী হরতাল ও বিক্ষোভসহ সংঘর্ষের ঘটনাকে স্বাধীনতাবিরোধীদের মহাতাণ্ডব উল্লেখ করে বুধবার (৩১ মার্চ) এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সন্ত্রাসী হেফাজতে ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব উদযাপন বানচাল করার জন্য সারা দেশে একের পর ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে। বিশেষভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তারা যে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনে গত শতাব্দীর কিংবদন্তীতুল্য সঙ্গীতগুরু ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শনসমূহ ধ্বংস করেছে এবং যে পৈশাচিকতায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছে তা আমাদের ৭১-এর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং পরবর্তীকালে আল কায়দা ও আইএস-এর নৃশংস বর্বরতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। সুনামগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরও একইভাবে হামলা এবং উপাসনালয় ধ্বংস করেছে।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে হেফাজতের তাণ্ডবে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর সম্পৃক্ততার কথা গণমাধ্যমে বলা হলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, যা হেফাজতীদের অধিকতর নৃশংসতায় প্ররোচিত করেছে। দেশের সকল শীর্ষ দৈনিক ও টেলিভিশনের প্রতিবেদনে হেফাজতের নেতাদের হুঙ্কার এবং তাণ্ডবের সচিত্র বিবরণ প্রকাশ করা হলেও ৩১ মার্চ ডেইলি স্টার-এর এক প্রতিবেদন থেকে আমরা জেনেছি গত ৫ দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলার জন্য ২৫টি মামলায় ১৫ হাজার আসামি করা হলেও মাত্র ৩৮ জন হেফাজতের স্থানীয় নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বাকিদের রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি, এমনকি হেফাজতের দুর্গ হাটহাজারীর সন্ত্রাসের ঘটনায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়নি।
আমরা বহুবার বলেছি, ৭১-এ যারা ধর্মের নামে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদেরই রাজনৈতিক ও আদর্শিক উত্তরাধিকারী হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম, যারা ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশকে মোল্লা উমরের তালেবানি আফগানিস্তান বানাতে চায়।
২০১৩ সালে ঢাকার মহাতাণ্ডবের ঘটনায় আমরা দেখেছি, জামায়াত-বিএনপির জোট কীভাবে এই মৌলবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনটিকে মদদ দিয়েছে। স্বাধীনতা দিবসে থানা ও পুলিশের ওপর আক্রমণকালে যখন হেফাজতের কয়েকজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে, তখন তথাকথিত সুশীল সমাজ ও বামপন্থীদের কয়েকজনের সন্ত্রাসীদের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের জন্য মায়াকান্নায় আমরা বিস্মিত হয়েছি।
আমরা অবিলম্বে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদ সন্ত্রাসী হেফাজতে ইসলামের সকল সভা সমাবেশ বন্ধ এবং হেফাজত-জামায়াতের মতো স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষণার জোর দাবি জানাচ্ছি। হেফাজত-জামায়াতের প্রতি যে কোনো নমনীয়তা শুধু সরকারের জন্য আত্মঘাতী হবে না- দেশ ও জাতির জন্য সমূহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, কথাশিল্পী ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন প্রমুখ।