রজনী খাতুন (২২) গর্ভবতী হওয়ার পর কয়েকবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করে রিপোর্ট পেয়েছেন যমজ সন্তানের। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর পাওয়া গেছে একটি সন্তান। বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না ওই দম্পতি। রোববার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটে। খবরটি জানাজানি হলে শুরু হয় নানা সমালোচনা। যদিও টেকনিকেল সমস্যার কারণে আল্ট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট ভুল আসায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
রজনীর স্বামী রাসেল মিয়া জানান, ২৮ সপ্তাহ হলে ৯ ফেব্রুয়ারি জীবননগর উপজেলা শহরের মা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাই আমার স্ত্রীকে। সেখানে তাকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন ডা. নাজমুল হাসান। আমার স্ত্রীর গর্ভে যমজ সন্তান আছে বলে জানান চিকিৎসক। পরে ৩৪ সপ্তাহে ৩১ মার্চ তাকে আবার ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাই। তখনও একই রিপোর্ট দেন ডা. এফ আফরোজ। শনিবার (১৬ এপ্রিল) স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে রোববার সকালে আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন ডা. নুর জাহান রুমি। এখানেও একই রিপোর্ট দেওয়া হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে সদর হাসপাতালে তার সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করেন ডা. আকলিমা খাতুন। অস্ত্রোপচারের পর একটি ছেলে সন্তান পাওয়া গেছে বলে জানান চিকিৎসক।
রাসেল মিয়ার দাবি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দুইবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করে একই রিপোর্ট দিয়েছে। অস্ত্রোপচারের আগেও একই রিপোর্ট দিয়েছে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাহলে অস্ত্রোপচারের পর কিভাবে একটি সন্তান পাওয়া গেছে বলছেন চিকিৎসক? আরেকটি সন্তান গেলো কোথায়? এ বিষয়ে আমরা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করবো।
সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নুর জাহান রুমি জানান, রজনী খাতুনের আল্ট্রাসনোগ্রাম করে একটি বাচ্চাই পাওয়া গেছে। কিন্তু রোগীর লোকজন দুটো বাচ্চা আছে দাবি করলে পরে আমি দুটো লিখে দিয়েছি।
সদর হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ আকলিমা খাতুন বলেন, সিজারিয়ান অপারেশন করে একটি বাচ্চাই পাওয়া গেছে। মা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক জাকির আহমেদ শাহীন জানান, ভুল হয়ে গেছে। ভুলের ঊর্ধ্বে কেউ না। আমার এখানে যারা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দিয়েছেন তারা প্যারামেডিকেল ডাক্তার।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান মুন্সী জানান, ডা. নুর জাহান নতুন যোগদান করেছেন। ছোট মানুষ ভুল করে ফেলেছে। তিনি বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান জানান, কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে পারেন না। আর সদর হাসপাতালের রিপোর্ট কেন ভুল হলো সে বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নেবেন। তিনি ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।