চট্টগ্রামের আদালত জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় ও পরে মিথ্যা মামলায় ফাসানোর অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় পিবিআই মাধ্যমে পুনরায় তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। অভিযোগপত্রের ব্যাপারে মামলার বাদী জসিম উদ্দীনের নারাজি আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন মোহাম্মদ রেজার আদালত এ আদেশ দেন। মামলায় কক্সবাজার জেলার টেকনাফে সেনা কর্মকর্তা সিনহা হত্যা মামলার আসামি সাময়িক বরখাস্ত হওয়া লিয়াকত আলীসহ তিন পুলিশসহ মোট সাতজন অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট জুয়েল দাশ (বাদীর আইনজীবী) বলেন, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় ও মিথ্যা মামলা দেওয়ার অভিযোগে লিয়াকতসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে জসিম উদ্দীন এ মামলা দায়ের করেন। আদালত ওই সময়ে তিন পুলিশসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছেন যে, মামলার অভিযোগের কোনো সত্যতা পাননি। তার প্রেক্ষিতে মামলার বাদী জসিম উদ্দিন আদালতে নারাজি দাখিল করেন। এরপ্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য আদেশ দিয়েছেন। আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
২০১৪ সালে লিয়াকত আলী যখন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ডিবিতে কর্মরত ছিল। তখন জসিম উদ্দিনের দায়ের করা একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তখনকার এসআই লিয়াকত। মামলা তদন্তের সময় লিয়াকত মামলার বাদী থেকে ৫০ হাজার টাকা চেয়ে নিয়েছেন। এরপর আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন লিয়াকত। ওই টাকা না দেওয়ার তাকে ক্রসফায়ারে হুমকি দেন। পরে জসিমকে অপহরণ করে নিয়ে দুই থানা ঘুরিয়েছে। পরে সদরঘাট থানায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরের দিন কুমিল্লার একটি মিথ্যা মামলা সাজিয়ে জসিমকে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছিল।
মামলায় সাত অভিযুক্তরা হলেন- সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের তৎকালীন এসআই লিয়াকত আলী, কুমিল্লা দাউদকান্দি থানার তৎকালীন এসআই নজরুল ও এসআই হান্নান। অপর চার অভিযুক্ত হলেন- এস এম সাহাবুদ্দিন, বিষ্ণুপদ পালিত, কাজল কান্তি বৈদ্য ও জিয়াউর রহমান।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট ব্যবসায়ী জসিম উদ্দীন মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়ে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণের আবেদন করেছিলেন আদালতে। কিন্তু আদালত তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছিল। তখন আদালত সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন এসআই সন্তোষ কুমার, পতেঙ্গা থানার তৎকালীন এসআই কামরুল, সদরঘাট থানার তৎকালীন এসআই তালাত মাহমুদ, পতেঙ্গা থানার তৎকালীন ওসি প্রণব চৌধুরী, সদরঘাট থানার তৎকালীন ওসি মর্জিনা বেগম ও গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেননি। তবে তদন্ত প্রক্রিয়ায় তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে সেটি প্রতিবেদনে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মামলার বাদী জসিম উদ্দীন বলেন, নারাজি আবেদনে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারসহ বাকি ছয়জনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সাগরিকা এলাকায় ২০১৩ সালে কারখানায় চুরির ঘটনায় মালিক এসএম জসিম উদ্দীন আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ডিবির তৎকালীন এসআই লিয়াকত আলী। ২০১৪ সালের ১৪ জুন তদন্ত কর্মকর্তা লিয়াকত আলী জসিম উদ্দীনকে তার অফিসে ডেকে নেন। এর আগেই মামলা সঠিকভাবে তদন্তের জন্য তার কাছ থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু পরবর্তীতে আবার জসিম উদ্দীনকে অফিসে ডেকে নিয়ে আসামিপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য চাপ দেন। জসিম উদ্দীন রাজি না হয়ে যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখন কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে তাকে আটক করে চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। চোখ খোলার পর দেখেন তিনি পতেঙ্গা থানায় আছেন। সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে তাকে মারধর করেন। পরে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। আড়াই লাখ টাকা সংগ্রহ করে তাদের হাতে দেন জসিম উদ্দীন। টাকা দেওয়ার পরও জসিম উদ্দীনকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার একটি ভুয়া পরোয়ানার মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রায় ছয় মাস জেল খেটে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।