সেতুর উপরের অংশে পণ্যবোঝাই ভারি লরি, নিচে যাত্রী বোঝাই ট্রেন থাকার সময় আট মাত্রার ভূমিকম্প এবং চার হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার জাহাজের ধাক্কায় পদ্মা সেতুর পিলারের ক্ষতি হবে না- এমন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং সেফটি নিয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ঈদুল আজহার পর গত ২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া-মাদারীপুরের বাংলাবাজার রুটে চলচলারত ‘ফেরি শাহজালাল’ পদ্মাসেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে পিলারের কিছু পলেস্তারা উঠে যায়। উল্টো ক্ষতি হয় ফেরির।
বহু ষড়যন্ত্রের পর শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কা পরিকল্পিত কিনা- তা নিয়ে সরকারের মধ্যে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এসব নানা আলোচনার মধ্যে সেতু বিভাগের সাবেক সচিব ও বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম দেশের বৃহত্তম এ অবকাঠামোর ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (২৬ জুলাই) ভার্চ্যুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংকালে পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ তোলেন সাংবাদিকেরা। এসময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমি বুঝতে পারলাম না। আমাদের অনেকেরই ভুল বা একটা ধারণা পরিষ্কার হয়নি।
‘পদ্মা সেতুর পিয়ারের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। পিয়ার পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। কারণ পিয়ারের বাইরে ২৫ ফুট গ্রেড আছে, ৫০ ফুট ডায়া মিটারের একটা ক্যাপ আছে। ফেরি ধাক্কা খেয়েছে পাইল ক্যাপের সঙ্গে। কিন্তু সব জায়গায় দেখলাম, মিডিয়াতে অনেক জায়গায় আসছে যে পিয়ারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে। পিয়ারের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ জাতীয় ফেরি বা ছোট ছোট শিপ যেগুলো আমাদের দেশে চলাচল করে, সেগুলোর পিয়ারের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা কম। ওই দিনও খায়নি। ধাক্কা খেয়েছে পিয়ার ক্যাপে, পিয়ার ক্যাপে একটু ইয়ে (পলেস্তারা) উঠে গেছে। ’
সাবেক এ সেতু সচিব বলেন, বিশ্বের কোনো ইঞ্জিনিয়ারই বলতে পারবে না যে আমার এ স্ট্রাকচার কোনো দিনই ভাঙবে না। কিন্তু আমরা চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং সেফটি নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। যদি কখনও ৮ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প হয় তখন যদি পিয়ার নিচ থেকে ৬২ মিটার মাটি সরে যায়, ৬২ মিটার মাটি সরে গেলে স্ট্রেনথ কমে যাবে।
পদ্মা বহুমুখী সেতার চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং নিরাপত্তার তথ্য দেন আনোয়ারুল ইসলাম। ‘মনে রাখবেন, (১) যদি ৮ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প হয় এবং পিয়ারের নিচ থেকে ৬২ মিটার মাটি সরে যায়, (২) তখন যদি ব্রিজের নিচের দু’টি লেয়ারের নিচের লেয়ার হেভি লোডেড ট্রেন দিয়ে বোঝাই থাকে এবং (৩) উপরে লোডেড লরি দিয়ে বোঝাই থাকে; (৪) তখনই যদি চার হাজার মেট্রিক টনের একটা শিপ পিয়ারের মধ্যে ধাক্কা মারে তবুও ব্রিজের কিছু হবে না, পিয়ারের কিছু হবে না-এগুলো হলো ইঞ্জিনিয়ারিং সেফটি। ’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রকৃতি যদি এর বাইরে কিছু করে সেটা ডিফারেন্টস থিং, আল্লাহ কাকে কখন কী করবেন…। কিন্তু পিয়ারের মধ্যে তো যেতে পারেব না আমাদের দেশের শিপগুলো। চার হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার শিপ তো ওদিকে যেতে পারবে না, গেলেও সেগুলো থাকে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন। চার হাজার মেট্রিক টনের শিপও যদি ধাক্কা মারে সেটি পিয়ার পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। পিয়ার ক্যাপের মধ্যে স্টপ হয়ে যাবে। সুতরাং সেদিক থেকে আল্লাহর রহমতে আমরা সেফটি আছি। আর ধাক্কা খেলে তো উপরে কিছু লাগবে। আমরা ভয় পেয়েছিলাম ফেরি ডুবে যায় কিনা।
সরকারের এ শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমরা দেখে এসেছি। এখন আমরা চ্যানেল করে দিয়েছি। এক চ্যানেল দিয়ে যাবে, আরেক চ্যানেল দিয়ে আসবে। যাতে আর এরকম না হয়। বিআইডব্লিউটির তদন্তে তেল চুরির জন্য সংক্ষিপ্ত রুটে চালাতে গিয়ে সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।