সাত বছরের কাওছার। সবসময় মুখে হাসি লেগে থাকে তার। চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই সে অসুস্থ। প্রায় ৩ বছর আগে মৌমাছির কামড়ে আচরণগত পরিবর্তন ঘটে তার। বন্ধ হয়ে যায় কথা বলা। ভাঙতে শুরু করে ঘরের আসবাবপত্র। কাউকে না জানিয়ে চলে যায় দূরে কোথাও। তাই চোখে চোখে রাখতে রশিতে দিয়ে তার পা বেঁধে রাখেন মা।
শিশু কাওছার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুলসুম বাগ গ্রামের দিনমজুর মো. আব্দুল আজিজের ছেলে। আজিজ জানান, তার তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে কাওছার তৃতীয়। দিনমজুরের কাজ করে সংসার পরিচালনা করেন তিনি। সংসারে অভাব থাকলেও শান্তিতে ছিলেন তারা। গত সাত বছর আগে জন্ম গ্রহণ করে কাওছার। সুন্দর চেহারা সঙ্গে মুখে ফুটফুটে হাসি লেগে থাকতো তার। তিনবছর বয়সেই সব কথা বলতে পারতো। কিন্তু একদিন উঠানে খেলতে গেলে মৌমাছি কামড় দেয় কাওছারের মাথায়। এরপর থেকে তার অচরণগত পরিবর্তন ঘটে।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও কোনো সমাধান না হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বিভিন্ন মানুষ ও স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে ছেলের চিকিৎসা খরচ জোগানো হয়। কিন্তু এরপরও কাওছার সুস্থ হয়নি।
কাওছারের মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘ছেলেডা কথা কয় না। ছাইড়া রাখলে ঘরের সব ভাইঙালায়। আবার অনেক দূরেও চইলা যায়। জামা-কাপড় পরাইলে ছিঁড়া খুইলালায়। যার কারণে গত তিন বছর ধইরা ছেলেডারে রশি দিয়ে বাইন্দা রাখি। এত ছোট পোলাডারে বাইন্দা রাখতে অনেক কষ্ট হয়। এরপরও কি করমু। টাকার লইগা চিকিৎসা করাইতে পারি না। ছেলেডার প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। টাকার অভাবে দুই মাস ধরে ওষুধও খাওয়াইতে পারি নাই। চট্টগ্রামের এক ডাক্তার কইছে কাওছারের ভালো চিকিৎসা করালে আবারও সুস্থ হইবো। এতে দুই লাখ টাকা খরচ হইবো। এত টাকা কই পামু। কেউ যদি আমাগোরে সাহায্য করে তাইলে ছেলেডার চিকিৎসা করাইতে পারতাম।’
এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল নোমান বলেন, বিষয়টি কেউ কখনো বলেনি। এমনকি ছেলেটির বাবা-মাও কখন আমার কাছে আসেনি। তবে আমি খোঁজ নিচ্ছি। শিশুটির চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার চেষ্টা করবো।