কেমন আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ? বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর জরিপ বলছে, গত ছয় মাসে একটি পরিবারের খরচ বা ব্যয় বেড়েছে ১৩.১ শতাংশ। গ্রাম এলাকায় এটি ১২.৪ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ১৩.৯ শতাংশ।
বুধবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘কেমন আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ?’ শিরোনামে সানেমের জরিপের বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।
তিনি বলেন, বেড়ে যাওয়া খরচের প্রভাবে নিম্ন আয়ের মানুষদের বিভিন্নভাবে সামঞ্জস্য করতে হচ্ছে। এ সময় খাদ্যে জাতীয়ভাবে খরচ বেড়েছে ১৭.২ শতাংশ। এছাড়া শহর অঞ্চলে এ খরচ বেড়েছে ১৯ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে ১৫.৫ শতাংশ।
সানেমের পক্ষ থেকে আয়োজকরা জানান, বৈশ্বিক ও জাতীয় বিভিন্ন বিষয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এ চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে ব্যয় বৃদ্ধি, যাতায়াতের বর্ধিত খরচ ইত্যাদি বিষয় নিম্ন আয়ের মানুষদের দুর্দশা বাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে স্বল্প আয়ের পরিবার বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করছে।
তারা বলেন, এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষ কীভাবে মোকাবিলা করছেন এবং সামনের দিনগুলোর বিষয়ে তাদের ভাবনা কী, তা বিশদভাবে বোঝার জন্য সানেম নিম্ন আয়ের থানাগুলোর ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। ২০২৩ সালের ৯ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে ১৬০০ থানার নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বাংলাদেশের আটটি বিভাগীয় জেলা ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।
জরিপ ফলাফল উপস্থাপন করে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ব্যয় বাড়ার বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করছেন— এমন প্রশ্ন রাখা হয় সাধারণ মানুষদের কাছে। জবাবে ৯০.২ শতাংশ বলেছে, তারা তাদের খাদ্যােভ্যাসে পরিবর্তন এনেছে। ধার করে চলছে ৭৩.৮ শতাংশ এবং ৫৫.৯ শতাংশ মানুষ বলেছে তারা নন-ফুড আইটেমের খরচ কমিয়ে এনেছে। সঞ্চয় করার সুযোগ কমিয়ে এনেছে ৫৫.৫ শতাংশ, ওভার টাইম কাজ করছে ৩৯.৩ শতাংশ, ৩৫.৩ শতাংশ মানুষ তাদের সঞ্চয় যা ছিল তা থেকে অতিরিক্ত খরচ করছে।
তিনি আরও বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের সঞ্চয়ের সুযোগ এমনিতেই কম। তার ওপর তাদের এ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিতে। অন্যদিকে, শহর ও গ্রামের মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় খাদ্য পরিবর্তন করেছে ৯৪.৪ শতাংশ মানুষ। গ্রামে সেটা ৮৬ শতাংশ। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ধার করে চলছে শহরের ৭৩.৮ শতাংশ এবং গ্রামের ৭৩.৮ শতাংশ মানুষ।
অনুষ্ঠানে সানেমের গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশাসহ অন্যান্য গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।