প্রায় ২০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে ৫৫০টি মুজিব কিল্লা। ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এবং বন্যা ও নদী ভাঙনপ্রবণ এলাকার বিভিন্ন উপজেলায় এসব কিল্লা নির্মাণ করা হবে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের তত্ত্বাবধানে ৬০টি উদ্ধারকারী নৌকা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটির খরচ হবে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। সম্প্রতি দুর্যোাগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ১৬তম বৈঠকের কার্যবিবরণীতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে সংসদ সচিবালয়ে ওই কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ব্রাক্ষণবাড়িয়া-৬ আসনের এমপি এবি তাজুল ইসলাম সংসদীয় কমিটির সভাপতি। সেপ্টেম্বরের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, নীলফামারী-১ আসনের এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার, সাতক্ষীরা-২ আসনের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং ও ফরিদপুর আসনের এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী।
কার্যবিবরণী অনুযায়ী মুজিব কিল্লা প্রসঙ্গে প্রকল্পটির পরিচালক (পিডি) মো: জানে আলম বলেন, বিদ্যমান ১৭২টি এবং নতুন ৩৭৮টিসহ সর্বমোট ৫৫০টি মুজিব কিল্লা ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এবং বন্যা ও নদী ভাঙনপ্রবণ এলাকার বিভিন্ন উপজেলায় নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ১৮৬টি, ‘বি’ ক্যাটাগরির ১৭১টি এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির ১৯৩টি রয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৫৭.৪৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ১৪.১২ ভাগ। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ৫টি মুজিব কিল্লা উদ্বোধন করেছেন এবং ৫০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক বলেন, মুজিব কিল্লা সাধারণত কমিউনিটি হল হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিয়ে করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা ও নদীভাঙন এর সময় মানুষের পাশাপাশি গরুছাগলও আশ্রয় নিতে পারে। তবে জলোচ্ছ্বাস বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সময় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবনগুলোতে মানুষ বেশি চলে যায়। ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা সবসময় হয় না এবং কিল্লাগুলো দেখাশুনা ও সংস্কারের উদ্দেশে কমিউনিটি হল হিসেবে ভাড়া দেয়াই মূল উদ্দেশ্য বলে তিনি জানান। আলোচনায় অংশ নিয়ে মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রায় সময় দেখা যায়, সরকারি খাস জমিতে বা নদীর পাড়ে মুজিব কিল্লা নির্মাণ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে নদী ভাঙনের ফলে এগুলোও ভেঙে যায়। আবার খাস জমি এমন জায়গায় পাওয়া যায় যেখানে রাস্তাঘাট কিছুই নেই এবং বসবাসের অনুপযোগী। গ্রামাঞ্চলে জমির দাম অনেক কম বিধায় বসবাসের উপযোগী এমন জায়গা নির্ধারণ করে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে নির্মাণ করলে ভুক্তভোগীরা উপকার পাবে। তাই জনগণ যেখানে উপকার পাবে সেখানে খাস জমি/অধিগ্রহণকৃত জমিতে মুজিব কিল্লা নির্মাণের প্রস্তাব করেন। তিনি আরও প্রস্তাব করেন যে, ‘এ’ ক্যাটাগরিরটি একতলা ভবন, ‘বি’ ক্যাটাগরির ২য়তলা ভবন এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির ৩য় তলা ভবন করা হোক।
এ পর্যায়ে কমিটির সভাপতি বলেন, অনেক জায়গায় বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র দরকার হয়। কিন্তু খাস জায়গা নেই, আবার অনেকে জায়গা দিতে চায় অথচ আশ্রয়কেন্দ্র দিতে পারি না। তাই ব্যক্তি উদ্যোগে যারা জায়গা দিতে পারে তাদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে মুজিব কিল্লা নির্মাণের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, প্রকল্পের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্থানীয় সংসদ-সদস্যদেরকে চিঠি দিয়ে তাদের চাহিদা চায়া যেতে পারে। যাদের আগ্রহ আছে তাদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে মুজিব কিল্লা নির্মাণের প্রস্তাব করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে মো. আফতাব উদ্দিন সরকার বলেন, মুজিব কিল্লা নির্মাণ নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকায় একটা ঝামেলা হয়েছে। মুজিব কিল্লা নির্মাণের জন্য ডিও লেটার দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে অনুমোদন নিতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে। কিন্তু যেই জায়গায় মুজিব কিল্লা নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয় সেখানে তহশিলদার কোর্টে মামলা করতে যায়। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে তিনি জানান। তহশিলদার সাহেব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে তার সঙ্গে কথা বললেই সমাধান হয়ে যেত বলেও তিনি মনে করেন। আলোচনা শেষে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় এমপিদের পরামর্শ মোতাবেক নির্ধারিত জায়গায়/খাসজমি/অধিগ্রহণকৃত জমিতে মুজিব কিল্লা নির্মাণ সুপারিশ করা হয়।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের তত্ত্বাবধানে তৈরি হচ্ছে ৬০টি উদ্ধারকারী নৌকা এদিকে একই সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন জানান, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের তত্তাবধানে ৬০টি উদ্ধারকারী নৌকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। নৌকাগুলো বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় উদ্ধারকাজে সহায়ক হবে। প্রতিটি নৌকায় প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাসহ ১০০ জন লোকের ধারণক্ষমতা রয়েছে। প্রতিটির খরচ হবে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জের পাগলায় নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ডে প্রস্তুতের কার্যক্রম চলছে এবং এতে প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলেও তিনি জানান। এ নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে মজিবুর রহমান চৌধুরী দুর্যোগকালীন উদ্ধারকাজে সহযোগিতার জন্য যে নৌকাগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো কোন কোন জেলায় এবং কার তত্ত্বাবধানে থাকবে তা জানতে চান। জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে রাখলে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার সময় তাদের অনুমতি নিতে সময় লাগবে।
যেহেতু নৌকাগুলো এই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হচ্ছে সেহেতু ডিআরআরও-এর নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রস্তাব করেন। তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ব্রিজ/কালভার্টের জন্য প্রতি বছর বরাদ্দ থাকে। বাংলাদেশের অনেক উপজেলায় ব্রিজ/কালভার্টের প্রয়োজন হয় না। ফেসবুক বা পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়, ব্রিজ/কালভার্ট দাঁড়িয়ে আছে, আশপাশে কোনো রাস্তাঘাট নেই। অপ্রয়োজনে এগুলো কি কারণে নির্মাণ করে সরকারের অর্থ অপচয় করা হলো তা বোধগম্য নয়। তাই, যে সকল উপজেলায় ব্রিজ/কালভার্টের প্রয়োজন তা মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে শুধুমাত্র সেই উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দেয়ার অনুরোধ করেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শেষে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে দেয়া সুপারিশে বলা হয়, বন্যা ও ঘুর্ণিঝড় তথা দুর্যোগকালীন উদ্ধারকারী নৌকাগুলো ডিআরআরও’র নিয়ন্ত্রণে রাখতে।