মহান মুক্তিযুদ্ধে বর্বর পাকসেনাদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত ছোট-বড় অনেক গণকবর লালমনিরহাটের আনাচে-কানাচে রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। হানাদার বাহিনীর নারকীয় গণহত্যার কালের স্বাক্ষী এইসব গণকবর। অযত্ন, অবহেলা আর উদাসীনতায় এসব গণকবরের অধিকাংশই এখন নিশ্চিহ্নপ্রায়। এমনকি স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও এসব গণকবরের সংখ্যাও নির্দিষ্ট করা হয়নি। ফলে জাতির পরিচয় আর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের ছোটবড় বহু ঘটনা আগামী প্রজন্মের কাছে অজানাই থেকে যাচ্ছে। যদিও দু’একটি গণকবর চিহ্নিত করে সীমানা প্রাচীর দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। বছরের নির্দিষ্ট দিনেই এসব বধ্যভূমিতে থাকা শহীদদের স্মরণে সরকারি বেসরকারি ভাবে কর্মসূচী পালন করা হয়।
বর্তমান প্রজন্ম, মুক্তিযোদ্ধা এবং স্থানীয় সচেতন মানুষের দাবি মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি আর স্বাধীনতার জন্য এদেশের মানুষের আত্মত্যাগের ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে গণকবরগুলি নিশ্চিহ্ন হওয়ার আগেই সংরক্ষণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার নীরব সাক্ষী এসব অরক্ষিত বধ্যভূমি ও গণকবর যথাযথভাবে সংরক্ষণের দাবি দীর্ঘদিনের। সচেতন মহল বলছেন, গণকবরগুলি চিহ্নিত করে ছোট-বড় প্রতিটি বধ্যভূমি যথাযথ সংরক্ষণের মাধ্যমে জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে।
খোর্দ্দসাপটানা এলাকার এনজিও কর্মী রমাকান্ত দাস বলেন, এমন একটা সময় আসবে যখন মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ছোট ছোট ঘটনা বলবার প্রত্যক্ষদর্শী মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। কালের গর্ভে এসব ইতিহাস যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য গণকবরগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
বেসরকারি স্কুলে কর্মরত শিক্ষক আমিনুর রহমানের দাবি, এখনি সময় এসব গণকবর সংরক্ষণ করার। সেই সঙ্গে গণকবরে কারা, কাকে, কেনো মাটিচাপা দিয়ে রেখেছিল- তা লিপিবদ্ধ করে রাখাও দরকার।
চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি অব ইন্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির সিভিল ইন্জিনিয়ারিং (চুয়েট) এর ছাত্র ধ্রুব রহমান বলেন, প্রয়োজনে এসব স্থানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানো উচিত। তার মত কলেজপড়ুয়া ছাত্র পিয়াল ও মারুফও চায় গণকবরগুলো সংরক্ষণ করা হোক।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদর উপজেলা কমান্ডার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও গণকবরগুলো যথাযথ সংরক্ষণের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। অথচ সবগুলো গণকবর চিহ্নিত করা হলে আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে বেশি বেশি করে জানতে পারতো। তার মতে, গণকবর সংরক্ষণে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। এখোনো যেসব মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন তাঁদের সহায়তা নিয়ে এই গণকবরগুলো সংরক্ষণ করা উচিত।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, কিছু কিছু গণকবর চিহ্নিত করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এর বাইরেও বেশ কিছু গণকবর আছে যেগুলো সংরক্ষণের জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট সবকিছু সংরক্ষণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা বহু আগে থেকেই দেওয়া আছে। কিছু গণকবর সংরক্ষিত হয়েছে, কিছু কাজ চলছে এবং এটা চলমান থাকবে।