স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছরে বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে।বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরামে বাংলাদেশ এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতি—‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ অনুযায়ী এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তবে তার সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করেই বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ের সেই তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ এখন অনেকের কাছে বিস্ময়।
বাংলাদেশ আয়তনে ছোট ও সীমিত সম্পদ নিয়ে ৫০ বছরের মাথায় অর্থনৈতিক ভিত মজবুত করেছে। একইসঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যাওয়ার সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। পাশাপাশি অনেক আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ফোরামে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশগুলোকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) নামে এই জোটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইউনিসেফ নির্বাহী বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ও জাতিসংঘ প্রকল্প সেবাগুলোর কার্যালয়ের (ইউএনওপিএস) নির্বাহী বোর্ডের সহ-সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক সিবেড অথরিটি কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সমুদ্র সম্পদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে থাকে ও সঠিক ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে সিবেড অথরিটি। আঞ্চলিক জোটের নেতৃত্বেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশনের (বিমসটেক) নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ। বিমসটেকের সদর দপ্তর এখন ঢাকায়। এছাড়া দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক জোট সার্ক বাংলাদেশের উদ্যোগেই গঠিত হয়েছিল।
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ভূমিকা কম নয়। বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। আর এই শান্তিরক্ষার কাজ করতে গিয়ে দেড় শতাধিক বাংলাদেশিকে জীবন দিতে হয়েছে। এছাড়া বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর চাপ উপেক্ষা করে পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে সই করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্বের অন্যতম মুসলিম দেশ হিসেবে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ৫০ বছরে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গেও কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে।
বাংলাদেশ এখন রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা করছে। ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে কূটনীতি চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, এক সময়ে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে মন্তব্য করা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাড়িয়েছে। আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছরে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়শীল কাতারে উন্নীত হওয়ার সুপারিশ পেয়েছি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে নেতৃত্ব দিচ্ছি। বিদেশে বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ তৈরিতে কাজ করছি। আমাদের কেউই ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।