রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জুবাইর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিস না করার পাশাপাশি জন্ম সনদের জন্য ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ৫০ টাকার জন্ম সনদের জন্য তিনি ৩ থেকে ৮ হাজার টাকা ঘুষ নেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ একাধিক ভুক্তভোগী। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ মার্চ নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদে যোগদান করেন জুবাইর রহামান। যোগদানের পর মার্চের বাকি দিনগুলো একদিনও অফিস করেননি তিনি। এপ্রিল মাসে তিনি ৩, ৮, ২৪ তারিখ, মে মাসে ১৫, ১৭ ও ১৮ তারিখ, জুন মাসে ৬,৭,৮, ১৭ ও ১৮ এবং জুলাই মাসে ২,৩, ৪ ও ৫ তারিখ মিলে মাত্র ১৫ দিন অফিস করেছেন। বাকি কর্মদিবসগুলো লালকালি দিয়ে অনুপস্থিত লেখা রয়েছে।
নিয়মিত অফিস না করার কারণে ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ মানুষ সরকারি সব ধরণের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এরই মধ্যে ১২ জন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করেছে। উপায়ন্তর না পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা আলমগীর “সচিব কর্তৃক সাধারণ জনগণের ভোগান্তি ও অনুপস্থিতির” বিষয়টি তুলে ধরে লিখিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের কাছে অভিযপগ জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদের চত্বরের সামনে সচিবকে ঘিরে রেখে কয়েকজন হট্টগোল করছেন। জানতে চাইলে রামদিয়া ব্রীজঘাটের বাসিন্দা মো: জাকির হোসেন জানান, তার ভাতিজার জন্মনিবন্ধনের জন্য সচিব প্রথমে ৩ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। তিনি ১২০০ টাকা দিয়েছিলেন। কাজ শেষ হওয়ার পর সনদ আনতে গেলে এখন তার কাছে আরও ১ হাজার টাকা দাবি করছেন।
শিশুর বয়স ৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা ও ৫ বছরের ওপরে সব বয়সীদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন ফি ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া জন্ম নিবন্ধনের জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদন ফি ১ শ’ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু ইউপি সচিব জুবাইর রহমান অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন বলে জানা গেছে।
চাকরিপ্রত্যাশী নবাবপুর গ্রামের মোহন খানের মেয়ে কোহিনুর আক্তার জানান, তিনি একটি চাকরির জন্য আবেদন করবেন। সেখানে জন্মসনদ দিতে হবে। শুক্রবার তিনি ঢাকায় ফিরবেন। কিন্তু সচিব সনদ না দিয়ে তাকে পরে আসতে বলেন।
ইউনিয়ন পরিষদের ৭,৮ ও ৯নং ওর্য়াডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য আছমা বেগম বলেন, সচিব টাকা ছাড়া কোনো কাজই করেন না। পরিষদের সদস্যদের কাছেও টাকা দাবি করেন। ১,২ ও ৩নং ওর্য়াডের মহিলা সদস্য সাফিয়া বেগম তার কাছে একটি জন্ম সনদ সংশোধনের জন্য গেলে তিনি ৮ হাজার টাকা দাবি করে বসেন। জনগণের সঙ্গে খুবই দুর্ব্যবহার করেন। সরকারি চেয়ারে বসেই তিনি ধুমপান করেন। তিনি মাদকাসক্ত। এর প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। তাকে এখান থেকে দ্রুত না সরালে আমরা বিপদে পড়ে যাব।
নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাদশা আলমগীর জানান, সচিব একজন দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। এছাড়া পূর্বের কর্মস্থল কালুখালীর সাওরাইল ইউনিয়নে থাকাকালীন সেখানকার সরকারি ফি ১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা জমা না দিয়ে চলে আসে। সে অফিসই করে না। যে কয়দিন করেছে সেই কয়দিনই জনগণকে ধোকা দিয়ে সরকারি ফির অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে। ঘুষ ছাড়া সে কোনো কাজই করতে চায় না।
তিনি আরও জানান, পরিষদের কাজ সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশ সনদসহ যেকোনো প্রত্যয়নের কাজ করে থাকে ইউপি সচিব। তিনি যদি অনুপস্থিত থাকেন তাহলে পরিষদ চলবে কি করে। জনগণ সেবা না পেয়ে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
নবাবপুর ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্য গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক বরারর চিঠি প্রেরণ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, অভিযুক্ত ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তিনি ৫০ টাকার জন্ম সনদ এর জন্য ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে জেলা প্রশাসককে আবগত করা হয়েছে।
রাজবাড়ী স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুতই বিষয়টি নিষ্পতি করা হবে।
অভিযুক্ত ইউপি সচিব জুবাইর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে পরিষদে গেলে তিনি সেই মুহূর্তে কোনো কথা বলতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। জরুরি মিটিংয়ের কথা বলে তিনি অফিস কক্ষ ত্যাগ করেন।
রাজবাড়ী স্থানীয় সরকার শাখা থেকে জানা যায়, অনিয়মিত অফিস করার দায়ে তার বিরুদ্ধে কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়ন পরিষদ অভিযোগ দায়ের করেন। পরে সেটি বিভাগীয় মামলায় তার শাস্তিও হয়। এই মামলায় তার বেতন কমিয়ে দুটি ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে দেন জেলা প্রশাসক।