করোনার কারণে গত দুই বছর ঋণ পরিশোধে ঢালাও সুবিধা পেয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। দেওয়া হয়েছে বিশেষ সুবিধাও। তারপরও শিল্প খাতে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।
গত বছর ডিসেম্বর শেষে শিল্প খাতে মোট ঋণ স্থিতি ছিল ৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। এ অংক মোট ঋণের ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে শিল্প ঋণের স্থিতি ছিল ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। ওই সময়ে এ খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৪৫ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে শিল্প খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। আর ঋণস্থিতি বেড়েছে ৫৬ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ নিচ্ছে কিন্তু পরিশোধ করছে না। ফলে ঋণের বড় অংশই একের পর এক খেলাপি হয়ে পড়েছে। নানা উদ্যোগের পরও খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে পারছে না নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। এতে দেশের ব্যাংকিং খাত এখন নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। বড় শিল্পে ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও বেশি মুনাফার সুযোগের ফলে বরাবরই বড় শিল্প ঋণে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৯ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিল্প খাতে বিতরণ হয়েছে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৭০ কোটি। সুতরাং ব্যাংকের মোট ঋণের ৩০ দশমিক ৪৭ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে শিল্প খাতে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিল্প খাতের খেলাপি ছিল ৪৯ হাজার ২৬২ কোটি। হিসাব অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপির ৪৭ দশমিক ৭০ শতাংশই শিল্প খাতের।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের একই সময়ে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) ছিল ৩ লাখ ৬১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৬১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।
এদিকে শিল্প ঋণ বিতরণের বিপরীতে আদায়ের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে ঋণ আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের একই সময়ে ছিল তিন লাখ ১৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে ঋণ আদায় বেড়েছে ৩২ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে শিল্প খাতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। ২০২০ সাল শেষে এর পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার ২২৩ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এছাড়া এ খাতে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ছয় লাখ ২৮ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এই অংক আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বকেয়া ছিল ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।
শিল্প খাতে খেলাপি বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢালাওভাবে সুবিধা দেবে; আদায়ে কোনো চাপ দেবে না তাহলে তো খেলাপি ঋণ বাড়বেই। কারণ খেলাপিরা দেখছে ঋণ পরিশোধ না করলেও কিছু হয় না। তাই তারা ঋণ ফেরত দিচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে উন্নতি করতে হলে আদায় বাড়াতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোকে টার্গেট দিয়ে দিতে হবে। যারা টার্গেট অনুযায়ী আদায় করতে পারবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।