লোয়ার অর্ডারদের সঙ্গে নিয়ে দারুণ হাফসেঞ্চুরি তুলে নিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে একা একা আর কত লড়া যায়! ফিফটির পর বেশিদূর যেতে পারলেন না এই অলরাউন্ডার। লেগস্পিনার বেন হোয়াইটকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে হলেন স্টাম্পিং।
বাংলাদেশ দলের শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হয়েছেন মিরাজ। ৮০ বলে ৫৫ রানের ইনিংসে ৬টি বাউন্ডারি আর ২টি ছক্কা হাঁকান এই অলরাউন্ডার। বাংলাদেশ ৮০.৩ ওভারে অলআউট হয়েছে ৩৬৯ রানে। প্রথম ইনিংসে টাইগারদের লিড ১৫৫ রানের।
আইরিশ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল অ্যান্ডি ম্যাকব্রিন। ১১৮ রান দিয়ে এই অফস্পিনার একাই শিকার করেছেন ৬ উইকেট।
এর আগে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেন। মুশফিকুর রহিমের ইনিংসটা বড় হচ্ছিল আস্তে আস্তে। তবে একটা সময় ধৈর্যচ্যুতি ঘটেই গেলো ডানহাতি এই ব্যাটারের। আইরিশ অফস্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনকে তুলে মারতে গিয়ে লংঅনে দুর্দান্ত এক ক্যাচ হলেন মুশফিক।
১৬৬ বলে গড়া মুশফিকের ১২৬ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংসটিতে ছিল ১৫ বাউন্ডারি আর ১টি ছক্কার মার। তিনটি জুটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। সাকিবের সঙ্গে ১৫৯, লিটনের সঙ্গে ৮৭ আর মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গে ৪৫ রান যোগ করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।
তার আগে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়ে তুলেছিলেন সাকিব। ১৫৯ রানের দুর্দান্ত এই জুটি বাংলাদেশকে লিড নেয়ার পর্যায়েও নিয়ে এসেছিলো। সাকিবও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু এক-দুটা বলে রান করতে না পারলে হঠাৎ করেই যেন ধৈর্যচ্যুতি ঘটে বাংলাদেশের ব্যাটারদের।
সাকিব আল হাসানেরও তেমনটা হয়েছে। ধৈর্যচ্যুতি ঘটার কারণে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে থাকা একটি বলে কট বিহাইন্ড হয়ে গেলেন তিনি। লেগ সাইডে ফিল্ডিং পুরোপুরি ফাঁকা রেখেছিলো আয়ারল্যান্ড। আর বোলার অ্যান্ড ম্যাকব্রাইন বল করছিলেন টানা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে।
এই ফাঁদেই পা দেন সাকিব। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল টেনে এনে শট খেলতে চাচ্ছিলেন বারবার। অবশেষে বলটা মিস করলেন তিনি। ব্যাটের উপরের কানায় লেগে গিয়ে বলটি জমা পড়লো উইকেটরক্ষকের হাতে। দলীয় ১৯৯ রানের মাথায় আউট হলেন সাকিব। এ সময় তার নামের পাশে শোভা পাচ্ছিল ৯৪ বলে ৮৭ রান।
এর আগে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারের ওপর ভর করে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছিলো বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের করা ২১৪ রানের জবাব দিতে নেমে শুরুতে কিছুটা বিপদে পড়ে টাইগাররা। কিন্তু অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের দৃঢ়তায় সে বিপদ কাটিয়ে ওঠে স্বাগতিকরা।
ঝোড়ো গতিতে ব্যাট করে প্রথমে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন অধিনায়ক সাকিব। ঝোড়ো গতিতে না হলেও তার দেখাদেখি হাফসেঞ্চুরির মাইলফলক পার হন মুশফিকুর রহিমও। ৬৯ বলে ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি।
৩৪ রান নিয়ে দিন শুরু করার পরপরই মুমিনুল হকের উইকেট হারিয়ে দারুণ বিপদে পড়েছিলো বাংলাদেশ। এরপর সেই বিপদ থেকে টাইগারদের টেনে তোলার গুরুদায়িত্ব পালন করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম।
আগের দিন নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হয়েছেন শূন্য রানে। তামিম ইকবাল আউট হন দিনের শেষ বলে ২১ রান করে। আর দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ১৭ রান করে বিদায় নেন মুমিনুল হকও। ৪০ রানের মধ্যে অভিজ্ঞ তিন ব্যাটার আউট হওয়ার পর বেশ চাপে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে মুশফিক আর সাকিবের প্রতিরোধ।
প্রথম দিন শেষ বিকেলে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারিয়ে অস্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করেছিলো টাইগাররা। রান ছিল ৩৪। ১৮০ রানে তখনও পিছিয়ে বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় আজ সকালে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল হক এবং মুশফিকুর রহিমের ওপর প্রত্যাশা ছিল সবচেয়ে বেশি। এ দু’জন ভালো একটা জুটি গড়বেন এবং বাংলাদেশকে একটা শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবেন, এ প্রত্যাশা নিয়ে সকাল সকাল মানুষ খেলা দেখতে বসেছিলেন।
কিন্তু সকালের খেলা শুরু হতে না হতেই বোল্ড হয়ে যান মুমিনুল হক (৩৪ বলে ১৭)। মার্ক অ্যাডেয়ারের বলটি ছিল লেগ স্ট্যাম্পের ওপর ফুল লেন্থের। মুমিনুল এক পা এগিয়ে এসে স্কয়ার লেগের ওপর কাট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিচু হয়ে আসা বলটির লাইনেই যেতে পারলেন না। তার আগে দেখলেন নিজের স্ট্যাম্প উড়ে গেলো।