নেত্রকোনার দুর্গাপুরে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সীতেশ চন্দ্র পাল। তিনি ৯ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন দুর্গাপুরে। শুধু তাই নয়, তিনি একাই পালন করছেন ৩৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) হন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তাহের ভূঁইয়া। এরপর থেকেই পুরো উপজেলার ১২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সামাল দিচ্ছেন ওই কর্মকর্তা।
যেসব প্রতিষ্ঠানে তিনি সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন সেগুলো হলো, দুর্গাপর উপজেলার মুন্সিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাগিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ জাগিরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাকরাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়, মউ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৈতাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খালিশাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৃষ্ণেরচর প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীরামখিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোদারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেওটুকুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোঁরাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারিখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শান্তিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুঁজিউড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব গোদারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাড়াউন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালিচান্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছোটকাটুরি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কোনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব বাকলজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চুকাইখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরচাপটাবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ছোট কুটুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আটলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জানা গেছে, সীতেশ চন্দ্র পাল ওই উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর। যোগদানের পর থেকেই একই পদে কাজ করছেন ৯ বছর ধরে। ক্লাস্টার ওয়ারি স্কুল ভাগ করা থাকলেও একক দায়িত্ব হওয়ায় পুরো উপজেলার ১২৬টি স্কুলের তদারকি করছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন এক জায়গায় থাকায় অনেক শিক্ষকের সঙ্গে তার সখ্যতা যেমন গড়ে উঠেছে, তেমনি অনেক শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বাজে আচরণ করার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে তৈরি হয়েছে তিক্ততা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসংখ্য শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন দুর্গাপুরে দায়িত্ব পালন করছেন সীতেশ চন্দ্র পাল। শিক্ষক থেকে হয়েছেন এটিও। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনিটরিং করতে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে রুক্ষ ভাষায় কথা বলেন। শিক্ষকদের অপমানজনক কথাবার্তা বলে থাকেন। ওই কর্মকর্তার বদলি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের মাঝে স্বস্তি আসবে না বলেও দাবি করেন তারা।
তবে শিক্ষা কর্মকর্তা সীতেশ চন্দ্র পাল জানান, ১২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনে খুবই হিমসিম খাচ্ছি। বাড়তি দায়িত্ব নিতে গিয়ে অনেকটা টাইট সিডিউলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ৬২টি প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। অনেকগুলোর কমিটি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়ে জানতে চাইল তিনি বলেন, ‘মানুষের মন মানসিকতা সব সময় এক রকম থাকে না। আমি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বার্থে হয়তো কোনো শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার সময় এদিক সেদিক হতে পারে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাহমিনা খাতুন বলেন, নেত্রকোনা জেলার ৪ উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নেই। অনেক উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। একটি জায়গায় দীর্ঘদিন থাকলে যা হয় আর কী। শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়টি নিয়ে এটিওর সঙ্গে কথা বলবো। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।