করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের ফলে কাজ না পাওয়া এসব মানুষ অনেকটা অনাহারেই জীবনযাপন করছেন। কেউ নিজের পুঁজির সব ভেঙে খাচ্ছেন। কারও পুঁজি না থাকলে না খেয়ে থাকছেন। এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ৩৩৩ নম্বরে খাদ্য সহায়তা চেয়ে আবেদন করার সুযোগ করে দেয় সরকার। এতে সহায়তা পাওয়ায় অনেকেই না খেয়ে থাকার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাচ্ছেন।
গত সাত দিনে (২৫ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত) খাদ্য সহায়তার জন্য ৩৩৩ নম্বরে প্রায় ৬ লাখ ফোনকল এসেছে। হেল্পলাইনটি বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধীনে ও ইউএনডিপির সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।
এটুআই প্রকল্পের কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মিডিয়া আউটরিচ কনসালট্যান্ট আদনান ফয়সল সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, গত ২৫ এপ্রিল ৩৩৩-এ খাদ্য সহায়তার বিষয়টি যুক্ত হওয়ার পর রোববার (২ মে) পর্যন্ত খাদ্য সহায়তার ইস্যুতে ৩৩৩ নম্বরে কল এসেছে প্রায় ৬ লাখ (৫ লাখ ৬৪ হাজার ১২৪টি)। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ২৯ হাজার ৬৯০ জনের তথ্য মাঠ প্রশাসনে (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের) পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, প্রতিদিনই হাজার হাজার ফোনকল আসছে। হয়তো এতক্ষণে ৬ লাখ কল চলে এসেছে। তবে এর মধ্যে অনেক ভুয়া কলও আছে। ফোন কল আসার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচটি প্রশ্ন করে শুরুতে প্রাথমিক তথ্য জেনে নেওয়া হয়। এরপর প্রকৃত অসহায়দের নির্বাচন করা হয় স্ক্রিনিং ও এজেন্ট স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে ক্রস চেক করে।
তিনি বলেন, মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ তাদের খাদ্য সঙ্কটের কথা এ সময়ে অনেকের কাছেই বলতে পারেন না। তারা আমাদের কাছে ৩৩৩ এর মাধ্যমে কষ্টের কথা জানাচ্ছেন। আমরা সেসব তথ্য স্থানীয় মাঠ প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাচাই-বাছাই করে অসহায়দের সহায়তা করা হচ্ছে।
যেভাবে পৌঁছে যাবে খাদ্য সহায়তা
৩৩৩ নম্বরে কল আসার পর খাদ্য সহায়তা চাওয়া প্রার্থীদের প্রকৃত অবস্থা নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত অভাবী মানুষের বাড়ি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়। মাঠ প্রশাসন থেকে খাদ্য সহায়তার তথ্য সংগ্রহ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের জরুরি সাড়াদান কেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকে বরাদ্দ করা খাদ্য মাঠ প্রশাসন অভাবীদের কাছে পৌঁছে দেয়।
৩৩৩-এ যোগ হয় খাদ্য সহায়তা যেভাবে
২০১৮ সালে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন মানবিক সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ৩৩৩ নম্বরের হেল্পলাইনটি চালু করা হয়। মূলত নাগরিকদের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন তথ্যসেবা দিয়ে থাকে এটি। পরে করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ চলাকালে ই-কমার্স সেবা, কর্মহীন দরিদ্র নাগরিকদের জন্য ত্রাণ সুবিধা সংক্রান্ত তথ্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন তথ্য, নিত্যপণ্য কিংবা ওষুধ কেনাসহ বিভিন্ন সেবা এতে যোগ করা হয়।
৩৩৩ নম্বরের সেবাগুলো আইভিআর তথা ইন্টারেক্টিভ ভয়েস রেসপন্সের মাধ্যমে দেওয়া হয়। প্রকৃত সেবাপ্রার্থীরা যেন তাদের সেবাটি সঠিকভাবে পেতে পারেন, সেজন্য এই আইভিআর সিস্টেমের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে একটি স্ক্রিনিং প্রক্রিয়ায় কলটি এজেন্টের কাছে পাঠানো হয়।
৩৩৩ থেকে সেবা পাওয়ার পদ্ধতি
এ নম্বরে কল করার পর শূন্য (০) চাপলে সরাসরি সরকারি তথ্য, সেবা ও সামাজিক প্রতিকার বিষয়ক তথ্য পাওয়া যাবে। চিকিৎসা, স্বাস্থ্য এমনকি করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে জানতে হলে ১ চাপতে হবে। করোনা মোকাবিলায় জরুরি খাদ্য ও অন্যান্য সেবা পেতে ৩ চাপতে হবে এভাবে নিত্যপণ্য দ্রব্য ও ওষুধের জন্য ৫ এবং সাইবার নিরাপত্তাজনিত বিষয়ের জন্য ৮ চাপতে হবে। ৩ অপশনটি শুধুমাত্র বিশেষ মুহূর্তে জরুরি সেবার জন্য তৈরি করা।