ব্যাপক অনিয়ম ও কেন্দ্র দখলের কারণে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন বন্ধ ঘোষণার পর সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে কমিশনের (ইসি) সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, একটি আসনের নির্বাচনে কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে একইদিনে সারাদেশে ৩০০ আসনে ভোটগ্রহণে মাঠ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পুরোপুরি ব্যর্থ হবে ইসি। এছাড়া নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিয়ে বিরোধী দলকে ভোটে আনতে ইসি বিশেষ উদ্দেশ্যে উপ-নির্বাচন বন্ধ করতে পারে।
বুধবার (১২ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশন গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করার পর এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান।
হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, গাইবান্ধার নির্বাচনে আবারও প্রমাণ হয়েছে এ কমিশন নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণে ব্যর্থ। যারা ১৪৫ কেন্দ্রে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, তারা হাজার হাজার কেন্দ্রে নিরাপত্তা দেবে কীভাবে? মানুষ যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে সেই দাবিতে বিএনপি এখন আন্দোলন করছে। বিএনপির আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন, তারা গাইবান্ধা থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।
ইসির সক্ষমতা না থাকলে নির্বাচন বন্ধ করলো কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে টোপ দেখানো হতে পারে। ইসি যে সরকারের কথায় চলে না, এমন বার্তা দিতে জনগণের আস্থা পেতে এটি ষড়যন্ত্রও হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কোনো কাজে সফল না হলেও তিনি অব্যাহতভাবে মিথ্যা বলে যাচ্ছেন। তিনি একটি আসনে ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, সেখানে তিনি একইদিনে সারাদেশের ভোটকেন্দ্রে কীভাবে নিরাপত্তা দেবে, সে প্রশ্ন এখন সবখানে। এছাড়া নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে ভোট বন্ধ করে বিরোধীদের নজরে আসতেও ইসি এটি করেছেন কি না সে প্রশ্ন তো আছেই।
গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
এ আসনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবার রহমান।
ভোট মনিটরিংয়ে তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন ভোটারের এ আসনে ১৪৫ কেন্দ্রের সবগুলোতেই এবার সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। ঢাকার নির্বাচন ভবনে স্থাপিত পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হয় কেন্দ্রের পরিস্থিতি। গোপন কক্ষে অবৈধভাবে একাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনা সরাসরি দেখার পর দুপুর ১টা পর্যন্ত কয়েক দফায় ৫১ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
অনেক কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল দুপুর ২টার পর নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করেন।
এছাড়া ভোট শুরুর পর থেকেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ ছিল অন্য চার প্রার্থীর। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান ছাড়া বাকিরা ভোটে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে দুপুর ১২টার দিকে ভোট বর্জন করেন।