বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১৬৮ জন মেয়র ও কাউন্সিলদের মধ্যে ২৯ ভাগ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিকের নিচে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সাথে তুলনা করলে এবারে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার কমেছে। ২০১৮ সালে স্বল্প শিক্ষিতের হার ছিল ৫৭ দশমিক ৩৫ ভাগ, যা এবার ৪৬ দশমিক ৭ ভাগ। বিশ্লেষণে অন্যান্য নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রবণতা নির্বাচনে অর্থের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষণ।
বিসিসি প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক এ তথ্য জানান।
বুধবার (৭ জুন) দুপুরে কীর্তনখোলা মিলনায়তনে সুজন জেলা ও মহানগর কমিটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমাদের প্রত্যাশা, আমরা প্রার্থীদের তথ্যের যে বিশ্লেষণ তুলে ধরছি, গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হবে। ফলে কী ধরনের প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সে ভোটারর সম্পর্কে ধারণা পাবেন। একইসাথে মেয়র প্রার্থীসহ স্ব স্ব এলাকার কাউন্সিলর প্রার্থীদের তথ্য সম্পর্কে তারা জানবেন। প্রার্থীদের সম্পর্কে ভালভাবে জেনে, শুনে ও বুঝে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
তিনি আরও বলেন, এবারের বিসিসি নির্বাচনে ১৬৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে ৪ জন প্রার্থী ধর্মীয় সংখ্যালঘূ সম্প্রদায় থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪২ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর সাথে ৩ জন নারী সাধারণ ওয়ার্ডে পুরুষদের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, উচ্চ শিক্ষিত প্রার্থীর হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে এবার। যেখানে ২০১৮ সালের ২৬ দশমিক ৪৭ ভাগ থেকে ২০২৩ সালের নির্বাচনে এই হার দাড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ১৩ ভাগ। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের তুলনায় ২০২৩ সালের নির্বাচনে ফৌজদারি মামলা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় ২০২৩ সালের নির্বাচনে স্বল্প আয়ের প্রার্থীর হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৭৫ ভাগ, এই নির্বাচনে তা হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৬৫ দশমিক ৮৭ ভাগ।
দিলীপ বলেন, অপরদিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় কম সম্পদের মালিকদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হ্রাস পেয়েছে। বিশ্লেষণে অন্যান্য নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রবণতা নির্বাচনে অর্থের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষণ। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়ীদের আধিক্য এবং অন্যান্য পেশার প্রতিনিধিত্ব হ্রাস পাওয়া ইতিবাচক নয়, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যও মঙ্গলজনক নয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৫৮ দশমিক ৮ ভাগ প্রার্থী ছিলেন ৫ লক্ষ টাকার কম সম্পদের মালিক। এবারের নির্বাচনে এই হার ২৯ দশমিক ৩৪ ভাগ। অপরদিকে বিগত নির্বাচনে কোটিপতির হার ৮ দশমিক ৮ ভাগ থাকলেও, এবারের নির্বাচনে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৩৭ ভাগ। বিশ্লেষণে বলা যায় যে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্বল্প সম্পদের মালিকদের হার যেমন হ্রাস পাচ্ছে, তেমনই অধিক সম্পদের মালিকদের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রার্থীদের সম্পদের হিসাবের যে চিত্র উঠে এসেছে; তাকে কোনোভাবেই সম্পদের প্রকৃত চিত্র বলা যায় না। কেননা, প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই প্রতিটি সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেন না, বিশেষ করে স্থাবর সম্পদের। আবার উল্লেখিত মূল্য বর্তমান বাজার মূল্য না; এটা অর্জনকালীন মূল্য। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেও আমরা হলফনামার ভিত্তিতে শুধুমাত্র মূল্যমান উল্লেখ করা সম্পদের হিসাব অনুযায়ী তথ্য তুলে ধরলাম। অধিকাংশ প্রার্থীর সম্পদের পরিমাণ প্রকৃত পক্ষে আরও অনেক বেশি বলে আমরা মনে?
এদিকে বরিশালে দায়-দেনাগ্রস্ত প্রার্থীর হার বিগত নির্বাচনের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়-দেনার হার ছিল ১১ দশমিক ৭৬ ভাগ। এবারের নির্বাচনে যা ১৬ দশমিক ৭৭ ভাগ। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সর্বশেষ অর্থ বছরে সর্বোচ্চ ১৭ লাখ ২৯ হাজার ৬৮০ টাকা কর প্রদান করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোঃ ইকবাল হোসেন। এছাড়া ১১৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৪৯ জন (৪১ দশমিক ৫৩ ভাগ) আয়কর প্রদান করেছেন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ১১ নং ওয়ার্ডের মজিবর রহমান ১৮ লাখ টাকার ওপরে আয়কর প্রদান করেছেন। ৪২ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে আয়কর প্রদান করেছেন ৮ জন ১৯ দশমিক ৫ ভাগ। এই ৮ জনের মধ্যে ৭ জনই ৮৭ দশমিক ৫০ ভাগ কর প্রদান করেন ৫ হাজার টাকা বা তার কম। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ৩৮৬ টাকা কর প্রদান করেছেন ৫নং ওয়ার্ডের ইসরাত জাহান।
অধ্যাপক গাজী জাহিদ হাসানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সুজন বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ১২ জুন নগরীর ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৫৮ বর্গকিলোমিটারের এই নগরীতে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। তাদের মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। এছাড়া পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন।