স্বজনের প্রিয় মুখটি আর দেখা যাবে না। তার পরও লাশটি পাওয়ার জন্য ২৬ দিনের অপেক্ষা। অবশেষে ফরেনসিক পরীক্ষার পর মিলল প্রিয় মানুষের কঙ্কাল। বুধবার রূপগঞ্জে গার্মেন্টসে লাগা আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করা ৪৫ জনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে সিআইডি। গতকাল সিআইডির তরফে ২৪ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। দুপুর পৌনে ২টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশ হস্তান্তর শুরু হয়।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক ইমাম হোসেন জানান, অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৮ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ফরেনসিক রিপোর্টে ৪৫ জনের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বুধবার ২৪ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে, বাকি ২১ জনের লাশ আগামী শনিবার হস্তান্তর করা হবে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই মর্গের সামনে আসতে থাকেন নিহত কর্মীদের স্বজনেরা। দুপুর পৌনে ২টার দিকে লাশগুলো স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া শুরু হয়। এ সময় স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো একে একে লাশ নিয়ে ঢামেকের মর্গ ছেড়ে চলে যায়। বেলা সাড়ে ৩টায় লাশ হস্তান্তর শেষ হয়।
সিআইডির ফরেনসিক শাখার এক কর্মকর্তা জানান, আগুনে পোড়া ৪৮টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে ৬৬ জন স্বজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলে ৪৫টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আজ ২৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি মরদেহ শনিবার হস্তান্তর করা হবে। লাশ বহন ও দাফনের জন্য নগদ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে স্বজনের হাতে।’ তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের কর্মীরা এবং পুলিশ মিলে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ তুলে দেন।’ প্রতিটি পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার এবং কোম্পানির পক্ষ থেকে ২ লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল যে ২৪ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে তারা হলেন—মো. আয়াত হোসেন, মো. নাঈম ইসলাম, নুসরাত জাহান টুকটুকি, হিমা আক্তার, মোসা. সাগরিকা শায়লা, খাদেজা আক্তার, মোহাম্মদ আলী, তাকিয়া আক্তার, মোসা. শাহানা আক্তার, মোসা. মিতু আক্তার, জাহানারা, মোসা. ফারজানা, মোসা. ফাতেমা আক্তার, মোসা. নাজমা খাতুন, ইসরাত জাহান তুলি, মোসা. নাজমা বেগম, রাশেদ, মো. রাকিব হোসেন, ফিরোজা, মো. তারেক জিয়া, মো. রিপন মিয়া, মোসা. শাহানা আক্তার, মো. মুন্না ও রিয়া আক্তার।
হাশেম ফুডসের কারখানায় আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় রূপগঞ্জ থানার ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাশেম, তার চার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। ঐ মামলায় গত ১০ জুলাই আবুল হাশেম, তার চার ছেলেসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে হাশেম ও তার চার ছেলে জামিনে মুক্তি পান। হাশেম ফুডসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহান শাহ আজাদ, উপ-মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বর্তমানে কারাগারে আছেন।
গত ৮ জুলাই রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস কারখানায় আগুনে পুড়ে ৫২ জনের মৃত্যু হয়। নিহত তিন ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় তখনই স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। বাকি লাশগুলো আগুনে এতটাই পুড়ে যায় যে, দেখে চেনা বা শনাক্ত করার উপায় ছিল না। পরিচয় শনাক্ত না হওয়া লাশগুলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা হয়।