ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত-তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এখন পর্যন্ত ২৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে, আহত হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভূমিকম্পের পর থেকেই বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে তুরস্ক। দেশটির প্রায় সকল বিভাগের কার্যক্রম ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা ঘিরে চলছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় দেশটির রাজধানী আঙ্কারায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, ২৪ ঘন্টার মধ্যে নতুন করে ৬৭ জনকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া দশ লাখের বেশি মানুষ অস্থায়ী আবাসনে আশ্রয় নিয়েছে।
এর আগে আদিয়ামানে বক্তৃতাকালে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন যে, ‘আমরা আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছি।’
দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা প্রেসিডেন্সি (এএফএডি) এক বিবৃতিতে বলেছে যে, অন্তত ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৪৬ জন অনুসন্ধান ও উদ্ধারকর্মী মাঠে কাজ করছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৭১৬ জন বিদেশি কর্মী ৭০টিরও বেশি দেশ থেকে সেখানে অংশ নিয়েছেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মোট ৯৭টি দেশ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। এরই মধ্যে ৭০টিরও বেশি দেশের দেশের অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল মাঠে নেমেছে।
ওকতে বলেন, ভূমিকম্প কবলিত অঞ্চল থেকে মোট ১ লাখ ৯০ হাজার লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিমানে করে ১৬শিশুসহ অন্তত ১২৬ জনকে রাজধানী আঙ্কারায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত অঞ্চলে ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৭৯ জনেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছেন।
উদ্ধারকারী দল ছাড়াও, কম্বল, তাঁবু, খাবার এবং মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা দল, খননকারী, ট্রাক্টর এবং বুলডোজারসহ ১২ হাজার ২৪৪টি যানবাহনও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। জীবিতদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ৯৭ হাজার ৯৭৩টি পারিবারিক তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে।
তুরস্কের পরিবেশ, নগরায়ণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মুরাত কুরুম বলেছেন যে, দেশটি ১০টি প্রদেশে একযোগে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আবাসন প্রকল্প চালু করবে।
এরদোয়ান এক বছরের মধ্যে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত দক্ষিণাঞ্চল পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রাথমিক ভূমিকম্পের পর তুর্কি সশস্ত্র বাহিনী এই অঞ্চলে অনুসন্ধান এবং উদ্ধারকারী দলগুলোকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি বিমান সহায়তা করিডোর তৈরি করেছিল। সেনাবাহিনীর বিশেষ বিমান এ-৪০০ এমএসসহ বিপুল সংখ্যক বিমান অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল এবং যানবাহন এই অঞ্চলে নিয়ে গেছে। অ্যাম্বুলেন্স বিমানগুলো এয়ার এইড করিডোর ব্যবহার করছে।
এএফএডি জানিয়েছে, ১৬৬টি বিমানের সাহায্যে উদ্ধার ও ত্রাণ কর্মী এবং উপকরণ এই অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া ১০টি প্রদেশে ৭৭টি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। মোট ২৬টি জাহাজও এই অঞ্চলে কর্মী এবং সামগ্রীর চালান এবং সরিয়ে নেওয়ার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।