চট্টগ্রামের মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল শিল্প প্লটের সংখ্যা ২৫০টি বাড়িয়ে ৫৩৯টি করবে সরকার। অর্থনৈতিক অঞ্চলে নতুন করে ফায়ার স্টেশনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, দুটি কারখানা ভবন, ফুটপাত, গাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, তিনটি আবাসিক ভবন, একটি মসজিদ ও একটি মেডিকেল সেন্টার নির্মাণসহ কয়েকটি নতুন অঙ্গ সংযোজন করা হবে। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পটি সরকার প্রথমবারের মতো সংশোধন করতে যাচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।
মূল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৭৫০ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এখন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর হতে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ছিল। এখন প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে ২০২৩ সালের জুন নাগাদ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (০৪ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য উপস্থাপন করবে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান জাগো নিউজকে বলেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে আগামী ১৫ বছরে পর্যায়ক্রমে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলমান। শিল্প প্লট বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্পে অন্যান্য কাজও বাড়বে। এ কারণে প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়বে। এতে সর্বোপরি প্রকল্পের কাজের পরিধিও বাড়ছে।
শরিফা খান আরও বলেন, শিল্প প্লটের সংখ্যা বাড়ানোর ফলে ভূমি উন্নয়ন ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজের পরিমাণও বাড়বে। কতিপয় কাজের ব্যয় হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হবে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা, পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, নতুন প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের কর্মদক্ষতা বাড়ানো হবে। অগ্রজ ও পশ্চাৎসংযোগ শিল্পকারখানা গড়ে তোলা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য হ্রাস তথা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নও করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ১ দশমিক ১৫৬ কোটি ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ৩ দশমিক ৬৪ লাখ বর্গমিটার রাস্তা ও ৩৮ হাজার ৭৮৫ বর্গমিটার ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। ৬১ হাজার ২৮৩ মিটার ড্রেন, ৯ হাজার ৩৬৮ মিটার বারবেড ওয়ার ফেন্সিং ও ৪ হাজার ৪৬৫ মিটার সীমানা দেয়াল নির্মাণ হবে। ৩ হাজার ৫১৬ বর্গমিটার অফিসার্স ডরমিটরি ও ২ হাজার ১১৬ বর্গমিটার স্টাফ ডরমিটরি ভবন থাকবে প্রকল্প এলাকায়।
এছাড়াও ৩ হাজার ১৭৩ বর্গমিটার বি টাইপ, ২ হাজার ৬৬১ বর্গমিটার সি টাইপ ও ২ হাজার ১৫৪ বর্গমিটার ডি টাইপের একটি করে আবাসিক ভবন নির্মাণ হবে। ৬ হাজার ১৫০ বর্গমিটার ইনভেস্টরস আবাসিক ভবন, ৫ হাজার ৫২ বর্গমিটার ইনভেস্টরস ক্লাব ও ৫ হাজার ৬২১ বর্গমিটার জোন সার্ভিসেস কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। একইসঙ্গে ২ হাজার ৬০৩ বর্গমিটার সিকিউরিটি ও কাস্টমস ভবন, ১ হাজার ৬ বর্গমিটার সিকিউরিটি ব্যারাক, ১ হাজার ৬ বর্গমিটার আনসার ব্যারাক, ৩৭ হাজার ৫৮২ বর্গমিটার কারখানা ভবন, ১ হাজার ৫৯ বর্গমিটার মসজিদ, ২ হাজার ৪১২ বর্গমিটার মেডিকেল সেন্টার ও আনুষঙ্গিক স্থাপনাসহ ৯৩৬ বর্গমিটার ফায়ার স্টেশন ভবন নির্মাণ হবে।
একইসঙ্গে এ প্রকল্পে ১৫৩ মিটার মেইন গেট ও সিকিউরিটি গেট, ২০২ মিটার কাস্টমস গেইট, ৩০টি সিকিউরিটি ওয়াচ টাওয়ার, একটি হেলিপ্যাড, দুটি কালভার্ট, ৩৯ হাজার ৩১০ মিটার ১১ কেভি এইচটি লাইন ও ৪৯টি সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি এক হাজার ৪৪৪টি সোলার স্ট্রিট লাইট ও ৩৭০টি সোলার সিকিউরিটি লাইট স্থাপন করা হবে। স্থাপন করা হবে ৫৮ হাজার ৩২৫ মিটার ট্রিটেড ওয়াটার ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক, ১৩ হাজার ৩৪৬ মিটার র-ওয়াটার কালেকশন নেটওয়ার্ক ও ১৩টি গভীর নলকূপ। ১৫ হাজার ৪৯৩ মিটার টেলিফোন নেটওয়ার্ক, ৪৮ হাজার ৯৩৭ মিটার গ্যাস সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ও এক হাজার ৪৮ কিলোমিটার ইফ্লুয়েন্ট নেটওয়ার্ক স্থাপন হবে এক প্রকল্পে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান, প্রবৃদ্ধি ও পণ্যের উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, শ্রমঘন শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন, শিল্প উৎপাদনে বেসরকারি খাতের প্রসার করা হবে। এছাড়া পণ্য উৎপাদন বহুমুখীকরণ এবং শিল্প উৎপাদনে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর মতো বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার সঙ্গে প্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, দ্রুত শিল্পায়ন, পণ্য উৎপাদন বহুমুখীকরণ, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে এবং তা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।