টানা ২০ দিন ধরে আন্দোলনের মাথায় বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ঘোষণা এসেছে। বুধবার (০১ ডিসেম্বর) শুধু ঢাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য শর্ত সাপেক্ষে হাফ ভাড়ার এই ঘোষণা দিয়েছে বেসরকারি বাস মালিকরা। এর আগে সরকারি পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) বাসে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সরকারি বাসে হাফ ভাড়ার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ)। কিন্তু বেসরকারি বাস মালিকদের হাফ ভাড়া ঘোষণার বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হবে না। ফলে এতে আশ্বস্ত হতে পারছে না আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবি, প্রজ্ঞাপনে অর্ধেক ভাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রজ্ঞাপনের দাবিতে মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শর্ত সাপেক্ষে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার ঘোষণা দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতে উল্যাহ। আজ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। তবে, ঢাকা মহানগরী এলাকার বাইরে কোথাও অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হবে না।
হাফ ভাড়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে মালিক সমিতি। শিক্ষার্থীদের নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়ার সুবিধা দেওয়া হবে। সরকারি, সাপ্তাহিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মৌসুমি ছুটির সময় অর্ধেক ভাড়া কার্যকর হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বার্ষিক ছুটির তালিকা অনুযায়ী, সাপ্তাহিক ছুটি বাদে বছরে স্কুল-কলেজে ৮৫ দিনের ছুটি থাকে। বছরে ৫২টি শুক্রবার রয়েছে। সেই হিসাবে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৩৭ দিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকে। বছরে তিনটি পরীক্ষার জন্য ৩৬ দিন সময় নির্ধারণ করা রয়েছে। সেই সময়ে শ্রেণিভেদে আরও কিছুদিন ছুটি পায় শিক্ষার্থীরা।
তবে, রাজধানীসহ দেশের বড় বড় বেসরকারি স্কুল-কলেজে সাপ্তাহিক ছুটি থাকে দুই দিন। সে ক্ষেত্রে ৮৫ দিনের সরকারি ছুটিসহ তাদের বছরে মোট ছুটি থাকে ১৮৯ দিন। এসব স্কুল-কলেজ ৩৬৫ দিনের মধ্যে খোলা থাকে ১৭৬ দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির তালিকা করে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল। সেক্ষেত্রে একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে, গড়ে বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটিসহ কমপক্ষে ১৩৭ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে।
ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কেন অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হবে না জানতে চাইলে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অর্ধেক ভাড়া ঢাকা শহরের জন্য প্রযোজ্য। কারণ এটা এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের দাবির জন্য আন্দোলন করেছিল। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ার বিষয়ে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের ঘোষণার পর বিআরটিএ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দিতে পারে। ’
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘বেসরকারি খাতের হাফ ভাড়া নিয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করার সুযোগ নেই। তা ছাড়া পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে মিডিয়ার সামনে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটা সবাই জেনেও গেছে। ’ বিআরটিএর এই ব্যাখ্যা কতটা যৌক্তিক জানতে চাইলে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন অনুযায়ী, ভোক্তারা যেন অতিরিক্ত দামের শিকার না হন, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। তাই পরিবহন মালিক সমিতিকে তাদের ঘোষণা লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে দিতে বাধ্য করতে পারে বিআরটিএ। তারপর তারা ব্যবস্থা নিতে পারে। ’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘দুই মাস পর যে এই ভাড়া কার্যকর থাকবে তার নিশ্চয়তা কী! তাই প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। আর আমাদের দাবি ছিল, সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হাফ ভাড়া নিতে হবে। শুধু ঢাকায় না, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা হাফ পাস চাই। এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত এসেছে, সেই ঘোষণা দেওয়ার এখতিয়ার পরিবহন সমিতিকে কে দিয়েছে? বিআরটিএ হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ঘোষণা বিআরটিএ থেকে আসা উচিত। তিনি বলেন, প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ভাড়ার তালিকা হতে পারে। বাসে দুই তালিকা ঝোলাতে সমস্যা হলে এক তালিকাতেই ছাত্রদের জন্য আলাদা কলাম করে ভাড়া উল্লেখ করে দিলেই সমস্যা চুকে যায়।