হার না মানা অদম্য এক নারী চট্টগ্রামের ডা. সুমনা সরকার। দীর্ঘ ১৮ বছরের অপেক্ষা শেষে বিসিএস ক্যাডার হয়ে গড়েছেন দৃষ্টান্ত। চোয়ালবদ্ধ লড়াইয়ের ফল পেয়েছেন মধ্যবয়সে এসে। সহকারী সার্জন পদে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত এই চিকিৎসকের দাবি, চাকরির জন্য নয়, তার যুদ্ধটা ছিল মেধা ও যোগ্যতার স্বীকৃতির।
চট্টগ্রামের লায়ন্স দাতব্য চক্ষু হাসপাতালে কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ডা. সুমনা সরকারের এই হাসি দীর্ঘ কষ্টের ফল। তার দেড় যুগের লড়াই, নাটক সিনেমার গল্পকেও যেনো হার মানায়। সেই ২০০০ সালে ২৩তম বিসিএসের লিখিত এবং মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। ২০০৩ সালে চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা দিতে গেলে মূল ঘটনার সূত্রপাত। পিতা ডা. অমল কৃষ্ণ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে অভিযোগ তুলে তার পরীক্ষা নেয়নি পিএসসি।
ডা. সুমনা সরকার বলেন, ওই সময় পুরো বিষয়টা আমার কাছে একটা পলিটিক্যাল ইস্যু মনে হলো। এছাড়া আমি তো কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না। তবে তাতে দমে যাননি এই নারী। ২০০৯ সালে হাইকোর্টে রিট করে ২০১৫ সালে পক্ষে রায় পান। পিএসসি আপিল করলে তাও নিষ্পত্তি হয় গত বছরের অক্টোবরে। অবশেষে ১৮ বছর পর সেই মৌখিক পরীক্ষা নেয় পিএসসি, ফলপ্রকাশ করে গত ৭ অক্টোবর। উত্তীর্ণ হলেও সুমনা সরকারের আফসোস থেকেই যাচ্ছে।
সুমনা সরকার আরও বলেন, রায়টা শোনার পরে অবশ্যই আনন্দিত আমি। কিন্তু আমার দুঃখ এটাই যে আমি যেভাবে ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলাম সেভাবে হয়নি। সময় মতো এই রায়টা পাইলে আমার লাইফ স্টাইলটা অন্যরকম হতো। এরই মাঝে জল গড়িয়েছে অনেক। পরীক্ষার সময় তার গর্ভে থাকা ছেলেও এখন ডাক্তারি পড়ছেন। ফল দেখে যেতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধা পিতা। এতো বছর পর পদায়নে জ্যেষ্ঠতা অনুসরণের দাবি করেছেন অদম্য এই নারী। দীর্ঘ এ লড়াইয়ে সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে ছিলেন চিকিৎসক স্বামী ডা. প্রবীর কুমার দাশ। তিনি বলেন, আমার মধ্যে একটা জিদ কাজ করেছে যে এটা একটা বড় অন্যায়। এই অন্যায়ের একটা প্রতিকার হওয়া উচিত।