শনিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘প্রাইভেট সেক্টর আউটলুক : প্রত্যাশা ও অগ্রাধিকার’-শীর্ষক বাণিজ্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ১৫ বছরে বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতে যে ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, তা অকল্পনীয় এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাংক থেকে ডিপোজিট নিয়ে চলে গেছে, যার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে বিরল, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা উত্তরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, তবে এক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে রিজার্ভ স্থিতিশীলতা ও সুদের হার সন্তোষজনক পর্যায়ের মাধ্যমে এ অবস্থার উত্তরণ হবে। এনবিআর নিয়ে বেসরকারিখাতের অভিযোগ রয়েছে, তবে সব আইন-ই ব্যবসা সহায়ক হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
উপদেষ্টা জানান, এনবিআরের কার্যক্রমে অটোমেশন করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ট্যাক্স পলিসি ও ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে আলাদা করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে বেসরকারিখাতে বিশেষ করে এসএমই খাতে ঋণ সহায়তা যেন কোনোভাবেই হ্রাস না পায় সে বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখাতে হবে বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে বেসরকারিখাতের সমন্বয় আবশ্যক এবং বিদ্যমান অবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। একই পণ্যের একাধিক বাণিজ্য সংগঠন আছে। এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের বাণিজ্য সম্প্রসারণে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে আমরা বেশকিছু অগ্রাধিকার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হব, এর পাশাপাশি সহায়ক নীতিমালার কোনো বিকল্প নেই। নিজেদের বাণিজ্যের উদারিকরণের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের সাব-সেক্টরগুলোর জন্য সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়াও সামাজিক ন্যয়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারি ব্যয় বাড়াবে, তাই আমাদেরকে কর আহরণ বাড়ানোর উপর জোরারোপ করতে হবে। এর মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন সম্ভব হবে।
বাণিজ্য সম্মেলনের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী বছরের শুরুতেই নীতি সুদহার এবং সুদহার ক্রমান্বয়ে হ্রাসকরণের পাশাপাশি সরকারি ব্যয় হ্রাস, বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, পণ্য ব্যবস্থাপনায় চাঁদাবাজি রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মার্কিন ডলারে বিনিময় হারকে বাজারে বিদ্যমান হারের কাছাকাছি রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজীকরণের মাধ্যমে বিশেষকরে এসএমইদের ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসা প্রক্রিয়া সহজতরের লক্ষ্যে সামগ্রিক শুল্ক ব্যবস্থার সংস্কারের পাশাপাশি ব্যবসা নিবন্ধন ও নবায়ন প্রক্রিয়ায় অটোমেশনের দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিএবির সভাপতি আব্দুল হাই সরকার, বিটিএমএ শওকত আজিজ রাসেল, ফিকির সভাপতি জাভেদ আখতার, এবিবির সভাপতি সেলিম আর এফ হোসেন, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী ও ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মোক্তাদির বাণিজ্য সম্মেলনে প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে আব্দুল মোক্তাদির বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করলেও কিছু ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যার সুফল আসবে। শিল্পকারখানায় অস্থিরতা কোনোভাবেই কাম্য নয়, তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন সুনির্দিষ্ট সময়সীমাসহ রোডম্যাপ থাকতে হবে। বিভিন্ন পণ্যের উচ্চ আমদানি শুল্কহারের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি এবং ছোট ব্যবসায়ীরা কঠিন পরিস্থিতি পার করছে।
আহসান খান চৌধুরী বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হলে ব্যবসার উন্নয়ন আসবে। তিনি উল্লেখ করেন, ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনের নিরিখে এলসি খুলতে না পারলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দুটোই ব্যাহত হবে। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি খাতের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি তিনি পার্শিয়াল বন্ড ইস্যুর প্রস্তাব করেন। এছাড়াও তিনি বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ঋণের সুদের হার কমানো প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।
সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন সরকারের পক্ষ হতে এখনও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়নি, তবে দ্রুতই এটি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। তবে অর্থনৈতিক খাতে সরকার বেশ ভালো করেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিই যথেষ্ট নয়, বরং পণ্যের সাপ্লই চেইনে চাঁদাবাজি বন্ধসহ বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে।