১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সবাইকে এ বিধিনিষেধ মানতে হবে। এই সাতদিন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিধিনিষেধের আওতায় সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলেছে সরকার। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যাংক বন্ধ থাকবে। তবে সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দর এলাকার ব্যাংকের শাখা ও বুথগুলো খোলা থাকবে। কারণ বন্দর কাস্টমসে পণ্য আমদানি-রফতানিতে প্রয়োজন হতে পারে; তাই সেখানকার সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো খোলা থাকবে।’
এদিকে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত দেওয়া সরকারি বিধনিষেধকালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত খোলা ছিল। আজ (সোমবার) লেনদেন হয় ১টা পর্যন্ত। আগামীকাল ১৩ এপ্রিলও লেনদেন হবে ১টা পর্যন্ত। লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বেলা ৩টা পর্যন্ত।
দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতির কারণে ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করে সোমবার (১২ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নতুন এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ১৪ এপ্রিল থেকে ৭ দিন দেশের সব অফিস-আদালত, শপিংমল, দোকানপাট, হাটবাজার বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সবধরনের পরিবহন চলাচল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে পোশাক কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখা যাবে।
বিধিনিষেধগুলো হলো
১. সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল বন্দর এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৩. সব ধরনের পরিবহন (সড়ক, নৌ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
৪. শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
৫. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।
৬. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
৭. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে।
৮. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৯. বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে।
১০. সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লেখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদপেক্ষ গ্রহণ করবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।
১১. স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।
১২. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবির নামাজে জমায়েত বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে।
১৩. উপরোক্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে।
করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ৭ দিনের জন্য গণপরিবহন বন্ধসহ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে ১১ দফা কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। দুদিন পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। এর একদিন পর খুলে দেওয়া হয় শপিংমলও। এতে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে সমালোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা।
এরই মধ্যে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়তে থাকে। প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হচ্ছে দেশে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘প্রয়োজনে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার’।
এরপর গত ৯ এপ্রিল সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রীও একই ইঙ্গিত দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ১২ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের জন্য নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করল সরকার। সরকারি ভাষায় এটি ‘বিধিনিষেধ’ হলেও গত বছরের লকডাউনের সময় দেওয়া নির্দেশনার সঙ্গে এর মিল রয়েছে।