বৈধ পথে দেশে আসা প্রবাসী আয়ের গতি ধারাবাহিকভাবে কমছে। চলতি মাসের প্রথম ২৭ দিনে দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১৩৬ কোটি মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৩ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১৪ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ চিত্র দেখা গেছে।
অক্টোবরের প্রথম ২৭ দিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৭ কোটি ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার আর বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।
এই সময়ে বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এরপর অগ্রণী ব্যাংকে ৯ কোটি ৪২ লাখ, ডাচ–বাংলা ব্যাংক এসেছে ৭ কোটি ৭২ লাখ, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ৭ কোটি ৬৫ লাখ ও সোনালী ব্যাংকেও ৭ কোটি ৬৪ লাখ এবং রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে আট ব্যাংক কোনো রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারেনি। বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি খাতের ব্যাংক আল-ফালাহ, হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।
এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বিভিন্ন ছাড় দেওয়ার পরও রেমিট্যান্সে গতি কম দেখা যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ১৫৪ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এই অঙ্ক গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২৭ দিনে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫০ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত মাস সেপ্টেম্বরের চেয়ে কম রেমিট্যান্স পাবে।
যদিও অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পরিমাণের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগস্ট মাসে আসে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ (২ দশমিক ০৩ বিলিয়ন) ডলার। আর জুলাইয়ে আসে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।
রেমিট্যান্স বাড়াতে উদ্যোগ
এখন বিদেশ থেকে যেকোনো পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাতে কোনো ধরনের কাগজপত্রের প্রয়োজন হচ্ছে না। আবার প্রবাসী আয়ের ওপর আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।
প্রণোদনা বাড়ার পরও সর্বশেষ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় পতন হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম।
ডলারের সংকট নিরসন ও প্রবাসী আয় বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরাই বসে গত ১১ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেয়। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) যৌথ সভায় দাম নির্ধারণ করে।
বাফেদা গত ২৩ অক্টোবর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য আমদানি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের সর্বোচ্চ দাম কত হবে তা পুনর্নির্ধারণ করে দিয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে রেমিট্যান্সের বিপরীতে ডলার কেনার সর্বোচ্চ দর আরও ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৭ টাকা করা হয়েছে। আর বাণিজ্যিক রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল নগদায়নে দর ৫০ পয়সা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা। ২৪ অক্টোবর থেকে রপ্তানি বিল নগদায়নের নতুন দর কার্যকর হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ‘টাকার বিনিময় মূল্য’ অংশে বলা হয়েছে, চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে এবং বাফেদার নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তব্যাংক লেনদেন এবং গ্রাহক লেনদেনের জন্য টাকার বিনিময়মূল্য নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো।
সবশেষ ২৭ অক্টোবর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য সর্বোচ্চ ১০৩ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১০০ টাকা ৭০ পয়সা।
তবে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলার বিক্রি করছে ৯৭ টাকায়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এই দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। তবে খোলাবাজারে বা কার্ব মার্কেটে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৮ থেকে ১০৯ টাকায়।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হিসাবের পরামর্শ দিচ্ছে আইএমএফ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের মতো করেই হিসাব করছে। সেই হিসাবে বর্তমানে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ৩৫ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ করেই দেশের রিজার্ভ হিসাবায়ন করবে, এ বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হিসাব করলে দেশের রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ২৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ।