যুক্তরাষ্ট্রে সদ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের (এসভিবি) যুক্তরাজ্য শাখাকে বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এইচএসবিসির কাছে মাত্র ১২৬ টাকা ৪৭ পয়সায় বিক্রি করে দিয়েছে ব্রিটেনের সরকার। ব্রিটেনে প্রযুক্তি স্টার্ট-আপ খাতের মূল ঋণদাতা এই ব্যাংকের শাখাকে একটি উদ্ধার চুক্তির আওতায় প্রতীকী ১ পাউন্ড মূল্যে কিনে নিয়েছে এইচএসবিসি।
গত শুক্রবার ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার আমানতের বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই ব্যাংকের পতনের পর যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তি খাতের গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে দেশটির সরকার গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে বৈঠকের পর এসভিবির যুক্তরাজ্য শাখা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়।
এ নিয়ে দফায় দফায় দেশটির সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সম্ভাব্য ক্রেতাদের মাঝে বৈঠক হয়। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের আকস্মিক পতনের পর রোববার মার্কিন কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের আমানত রক্ষায় এই ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এসভিবির পতন বিশ্ব পুঁজিবাজারে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি করেছে। সোমবার ইউরোপীয় ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৬ শতাংশ কমে গেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই ব্যাংকের শেয়ারের দরে টানা দু’দিন পতন ঘটেছে। এইচএসবিসির শেয়ারের দামও ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে।
উদ্ধার চুক্তির আওতায় এসভিবির যুক্তরাজ্য শাখাকে এইচএসবিসি কর্তৃপক্ষের কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্তে ব্রিটেনের বিভিন্ন মন্ত্রী, নিয়ন্ত্রক এবং প্রযুক্তি স্টার্ট আপ খাতের ব্যক্তিরা স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছেন, এসভিবির গ্রাহকরা স্বাভাবিকভাবে লেনদেন করতে পারবেন।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এবং ব্রিটেনের সরকারের রাজস্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে এসভিবির যুক্তরাজ্য শাখা বিক্রির ওই চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, ইউরোপের বৃহত্তম ব্যাংক এইচএসবিসি। এসভিবি যুক্তরাজ্য শাখার গ্রাহকদের এখন শক্তি, সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আশ্বস্ত বোধ করা উচিত।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, যেখানে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি, আমাদের সবচেয়ে কৌশলগত কোম্পানিও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।’
এইচএসবিসির ত্রাতা হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হান্ট বলেন, ‘তার অগ্রাধিকার ছিল ব্রিটিশ করদাতাদের অর্থের ব্যবহার এড়ানো। এক পাউন্ড সমান ১ দশমিক ২১ ডলার।’
ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড বলেছে, তারা আর্থিক ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা তৈরি এবং ব্রিটিশ প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর যে কোনও পতনের ঝুঁকি হ্রাসে এসভিবি যুক্তরাজ্য শাখা বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। বিক্রি হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকের আমানত এবং বিস্তৃত ব্যাংকিং ব্যবস্থা এখন সুরক্ষিত ও নিরাপদ আছে।
রয়্যাল লন্ডন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের জ্যেষ্ঠ তহবিল ব্যবস্থাপক ও এইচএসবিসির বিনিয়োগকারী রিচার্ড মারউড বলেন, এমন সংকটময় মুহূর্তেও একটি ভালো চুক্তি দেখা যাচ্ছে। এসভিবিতে তারল্য এবং আমানতকারীর আস্থার অভাব ছিল। কিন্তু এইচএসবিসিতে দু’টিই রয়েছে।