১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালের সকাল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বাসিন্দারা অন্যান্য দিনের মতোই কর্মস্থলের দিকে ছুটছিলেন । মানুষজনের পদচারণায় ততক্ষণে মুখরিত হয়ে উঠেছে ব্যস্ততম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার। আজই তাদের জীবনের শেষ দিন কিংবা জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের দিন এই মানুষগুলোর কেউই ঘুর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি !
দুটি যাত্রীবাহী বিমান দিয়ে আঘাত হেনে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হয় আকাশচুম্বি ভবন দুটিকে। কয়েক হাজার মানুষ মুহূর্তেই প্রাণ হারালেন । গোটা বিশ্ব চমকে গিয়েছিল শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ এই আত্মঘাত হামলায় ।
ম্যাসাচুসেট্স অঙ্গরাজ্যের বোস্টনের লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের নিউয়ার্কের নিউইয়র্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের লাউডেন কাউন্টি এবং ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টির ওয়াশিংটন ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চারটি বিমান ছিনতাই করে ১৯ জন ছিনতাইকারী। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ২০ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল ভর্তি আমেরিকান এয়ারলাইনসের বোয়িং-৭৬৭ উড়োজাহাজটি নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর দিকের টাওয়ারের ৮০তম তলায় ঢুকে পড়ে। হামলার সঙ্গে সঙ্গেই নিহত হন শত শত মানুষ, ভবনের ভেতরে আটকে পড়েন আরও অসংখ্য মানুষ। এর ১৮ মিনিট পরে, সকাল ৯টা ০৩ মিনিটে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের বোয়িং-৭৬৭ উড়োজাহাজ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ দিকের টাওয়ারের ৬০তম তলায় আঘাত হানে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টুইন টাওয়ারের উত্তর দিকের ভবনটি ভেঙে পড়ে।
৪২ মিনিট পর তৃতীয় হামলাটি হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগনে। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে পেন্টাগনের পশ্চিম দিকে আঘাত করে আমেরিকান এয়ারলাইনসের বোয়িং-৭৫৭ উড়োজাহাজটি।
চতুর্থ বিমান হামলা হয় সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। নিউজার্সি থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করার ৪০ মিনিট পর ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৯৩ ছিনতাই করা হয়। বিমানের যাত্রীরা নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে হামলার বিষয়টি ইতোমধ্যে জেনে গিয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেই যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের বাধায় পশ্চিম পেনসিলভানিয়ার শ্যাংকসভিলের কাছে একটি ফাঁকা মাঠে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানে থাকা ৪৪ জনের সবাই নিহত হন। ধারণা করা হয় ছিনতাইকারীরা চতুর্থ বিমানটি দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে আঘাত হানতে চেয়েছিল।
১৯ জন হামলাকারীসহ মোট ২ হাজার ৯৯৬ জন নিহত হন নাইন-ইলেভেনের হামলায় । এর মধ্যে শুধু ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে দুই বিমান হামলায় মারা যান ২ হাজার ৭৬৩ জন। চারটি বিমানের ২৪৬ জন যাত্রী এবং ক্রুর প্রত্যেকে মারা যান। পেন্টাগনের হামলায় প্রাণ হারান ১২৫ জন। আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করতে গিয়ে ৩৪৩ জন দমকলকর্মী এবং ৬০ জন পুলিশ সদস্য মারা যান। চারটি হামলায় সম্মিলিতভাবে ৭৮টি দেশের মানুষ নিহত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ওসামা বিন লাদেনের সংগঠন আল-কায়েদা এই হামলার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেছিল। ১৯৯৬ সালে সৌদি নাগরিক খালিদ শেইখ মোহাম্মদ আফগানিস্তানের তোরা বোরাতে ওসামার সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে বিমান হামলা চালিয়ে ভবন ধ্বংসের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চূড়ান্ত বৈঠক হয় ২০০১ সালে জার্মানির হামবুর্গে। আল-কায়েদার হামবুর্গ সেল পুরো হামলার নেতৃত্ব নেয়। ছিনতাইকারীদের প্রত্যেকটি দলে এক জন করে বিমান চালক হিসাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লাইং স্কুলেই তারা বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিল।১৯ ছিনতাইকারীর মধ্যে ১৫ জন ছিল সৌদি নাগরিক, দু’জন সংযুক্ত আরব আমিরাতের, একজন মিশরের এবং একজন লেবাননের।