ছাত্র-জনতার গণভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় থাকাকালীন বাছবিচার না করেই দেদারসে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে দেশে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন (১০ হাজার ৩৭৯ কোটি) ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮৩.২১ বিলিয়ন (৯ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা) সরকারের ও বাকি ২০.৫৭ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতের দায়।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ওই সময় অর্থাৎ ২০০৮-০৯ সাল শেষে সরকারের বিদেশি ঋণ ছিল ৫০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। ১৫ বছর ৮ মাসের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর শুধু শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। ২০০৮-০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদেশি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৩৬ কোটি (৫০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন) ডলার। সেই হিসেবে গত ১৫ বছরের বৈদেশিক ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সুদের হার বাড়ার ফলে ক্রমেই বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকারি খাতের বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারের নিজস্ব, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকারি সংস্থার ঋণ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুন শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ। এর মধ্যে ৮৩.২১ বিলিয়ন (৯ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা) সরকারের ও বাকি ২০.৫৭ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতের দায়। সরকারের বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়ার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি হারে সুদ ও কঠিন শর্তে নেওয়া এসব ঋণ সরকারি সংস্থাগুলোর দেওয়া পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। চাপে পড়েছে মানুষ।
চলতি বছরের জুন শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে সরকার ও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণে স্থিতি ছিল ৯৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন (৯ হাজার ৯৩ কোটি) ডলার। অর্থাৎ তিন মাসেই প্রায় ৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ নিয়েছে।
এদিকে ২০২৪ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে। ডিসেম্বর শেষে এ ঋণ ছিল ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের অক্টোবর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন থাকলেও চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৯ মাসে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ কমেছে ৭০৬ মিলিয়ন ডলার। জুন পর্যন্ত মোট বিদেশি ঋণের ১১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন স্বল্পমেয়াদি এবং ৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন দীর্ঘমেয়াদি ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৩ মাসের ব্যবধানে দেশের সরকারি খাতের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। গত মার্চে সরকারি খাতের বিদেশি ঋণ ছিল ৭৯ বিলিয়ন ডলার। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ঋণ বেড়েছে ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ।