প্রথম দুই টি-টোয়েন্টি জিতে সিরিজ আগেই নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচটি ছিল আইরিশদের হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডোবানোর। কিন্তু প্রতিপক্ষকে লজ্জা দিতে গিয়ে নিজেরাই লজ্জায় পড়ে গেলো টাইগাররা।
চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়েছে আয়ারল্যান্ড। ৭ উইকেট আর ৬ ওভার হাতে রেখে পাওয়া সহজ জয়ে ১-২ ব্যবধানে হেরে সিরিজ শেষ করেছে তারা।
আয়ারল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ১২৫ রানের। ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭ রানে প্রথম উইকেট হারায় আইরিশরা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ওপেনার রস এডায়ারকে (৯ বলে ৭) বোল্ড করেন তাসকিন আহমেদ। এরপর লরকান টাকারকে (৪) উইকেটরক্ষক লিটন দাসের ক্যাচ বানান শরিফুল ইসলাম। ওই পর্যন্তই।
অধিনায়ক পল স্টারলিং আর সুযোগ দেননি টাইগার বোলারদের। ঝোড়ো গতিতে ৩১ বলে ফিফটি পূরণ করেন। অভিষিক্ত রিশাদের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে তিনি যখন ফিরেছেন, আইরিশদের ৪৭ বলে দরকার মাত্র ১৬ রান।
৪১ বলে ৭৭ রানের ঝোড়ো ইনিংসটি স্টারলিং সাজিয়েছিলেন ১০ চার আর ৪ ছক্কায়। হ্যারি টেক্টর ১৪ আর কুর্তিস ক্যাম্ফার ১৬ রান নিয়ে বিজয়ীর বেশেই মাঠ ছাড়েন।
অভিষেকে মোটামুটি ভালোই করেছেন রিশাদ হোসেন। ৩ ওভারে ১৯ রান দিয়ে একটি উইকেট শিকার করেন এই লেগস্পিনার।
এর আগে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে একশর আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল বাংলাদেশ। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বলতে গেলে একাই লড়াই করেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী।
তার লড়াকু হাফসেঞ্চুরিতে ভর করে আইরিশদের বিপক্ষে টেনেটুনে সম্মানজনক পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। ৪ বল বাকি থাকতে অলআউট হয় ১২৪ রানে।
আগের দুই ম্যাচে টস হারলেও প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলো বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচে এসে টস জিতে নিজেরাই বেছে নিয়েছে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত। কিন্তু এবার শুরু থেকেই মহাবিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা।
৬১ রানের মধ্যে ৭ ব্যাটার ফেরেন সাজঘরে। অষ্টম উইকেটে নাসুম আহমেদকে নিয়ে ৩৩ বলে ৩৪ রানের একটি জুটি গড়ে দলকে সেই বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করেন শামীম। ৪০ বলে ফিফটি করে এই শামীমই শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হয়েছেন। ৪২ বলে গড়া তার ৫১ রানের ইনিংসে ৫টি চারের সঙ্গে ছিল ২টি ছক্কার মার।
আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস এবং রনি তালুকদার তাণ্ডব চালিয়েছিলেন আইরিশ বোলারদের ওপর। দ্বিতীয় ম্যাচে তো রীতিমত ১২৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়েছিলেন তারা। এ দু’জনের উড়ন্ত সূচনার পর বাংলাদেশের স্কোর ২০০ পার হয়ে গিয়েছিলো দুই ম্যাচেই।
কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে এসে লিটন, রনি এবং শান্ত- তিনজনই ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন। ব্যাট করত নেমেই যথারীতি উড়ন্ত সূচনারই চেষ্টা করেছিলেন লিটন। একটি বাউন্ডারিও মেরেছিলেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই মার্ক অ্যাডেয়ারের বলে জর্জ ডকরেলের হাতে ধরা পড়েন তিনি। দলীয় রান তখন ৯।
এরপর রনি তালুকদারও তার স্বভাবসুলভ ঝড় তোলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই সেই ঝড় থামিয়ে দিলেন কুর্তিস ক্যাম্ফার। ১০ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৪ রান করেন রনি। দলীয় রান তখন ২৪। তার আগেই ১৮ রানের মাথায় ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্ত। ৮ বল খেলে ধুঁকতে থাকা শান্ত আউট হন কেবল ৪ রান করে।
ব্যাটিং বিপর্যয় চলমান রেখে দ্রুত আউট হয়ে যান সাকিব আল হাসান এবং তাওহিদ হৃদয়ও। দলকে ৪১ রানের মাথায় বসিয়ে আউট হন দু’জনই। ৬ বলে সাকিব ৬ রান করেন। সম্ভাবনাময়ী তরুণ তাওহিদ হৃদয়ের ওপর আস্থা ছিল এই বিপর্যয়ে হাল ধরবেন। কিন্তু তিনিও পারলেন না। দলীয় ৪১ রানের মাথায় আউট হন তিনিও। ১০ বলে একটি করে চার-ছক্কায় হৃদয় করেন ১২ রান।
সেখান থেকে অভিষিক্ত রিশাদ হোসেন এবং শামীম পাটোয়ারী চেষ্টা করেন হাল ধরার। ২০ রানের জুটি গড়ে ৬১ রানের মাথায় আউট হয়ে যান রিশাদ। ৭ বলে ৮ রান করেন তিনি। তাসকিন আহমেদ আউট হন কোনো রান না করেই।
আইরিশ পেসার মার্ক এডায়ার ২৫ রানে নেন ৩টি উইকেট। অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার ম্যাথু হামপ্রিস ১০ রান দিয়ে শিকার করেন ২টি উইকেট।