সবকিছু ঠিক থাকলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলন বেগবান করতে চলতি সপ্তাহেই এক দফার ঘোষণা দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এর মধ্যদিয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সরকারবিরোধী আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা।
বিএনপি নেতাদের দাবি, এবারের আন্দোলনে ৩৬টি রাজনৈতিক দল তাদের সঙ্গে সরকার পতনে মাঠে নামতে সম্মত হয়েছে। ফলে শিগগিরই এক দফার ঘোষণা দেওয়া হবে।
ঘোষণা অনুযায়ী আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের চিন্তা নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। তবে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বরাবরই সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলা হলেও এর ঠিক উল্টো অবস্থানে বিএনপি। দলটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া দেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন করতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
এ নিয়ে আন্দোলনে নামার আগে থেকেই বিএনপি ও অন্য দল এবং জোটগুলো সময়ে সময়ে অনেক দফার কথাও বলে আসছিল। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, দফা ততই কমে আসছে দলগুলোর। বিএনপির দাবির সঙ্গে অনেকটা একাকার হয়ে যাচ্ছে অন্যদের দাবি।যদিও নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে দীর্ঘদিন জোটবদ্ধ আন্দোলন করলেও একপর্যায়ে অনানুষ্ঠানিকভাবেই ভেঙে গেছে সেই জোট। তবে বিএনপির নেতৃত্বে থাকা ছোট ছোট দলগুলো নিজ নিজ প্লাটফর্ম থেকে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি জোটে ছিলেন না- এমন অনেক নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত দলগুলোও বিএনপির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মাঠে নেমেছে। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত এমন দলের সংখ্যা ৩৬টিতে দাঁড়িয়েছে।
এসব দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, ধীরে ধীরে ফলপ্রসূ আলোচনার কারণে এখন সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই সেই ঘোষণা আসবে। যেখানে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে মাঠে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কথা হলে সমমনা দলগুলোর অন্যতম নেতা ও গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা এই সপ্তাহেই এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা করব আশা করছি। ইতোমধ্যে আমাদের ২১ জন প্রাণ দিয়েছে। আরও যেতে পারে। শত শত নেতাকর্মী জেলে। নিপীড়ন চলছে। সুতরাং আমরা আর সময় দিতে চাই না।’বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো একসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘোষণার জন্য তিনটি অপশন নিয়ে কথা হচ্ছে। একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এবং অন্যটি যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন। আর তৃতীয়টি হলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঘোষণা।
গণফোরামের শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন ও দাবির বিষয়ে শুধু জনগণ নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও সাড়া পাচ্ছি। তাই এবারের আন্দোলনে সফল হবে।’
একই কথা জানিয়েছেন লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম নেতা এবং বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘সমমনা দলগুলোর সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষ পর্যায়ে। ঈদের পর তিনটি বৈঠক হয়ে গেছে। আশা করছি, আর একটি বৈঠকের মাধ্যমে বাকি দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক পর্ব শেষ হবে। এরপরই এক দফা আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা।’এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা ঠিক কবে হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘খুব শিগগিরই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।’
এ সময় চলতি মাসেই এক দফা ঘোষণার ইঙ্গিত দিলেও সুনির্দিষ্ট করে কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি বিএনপির লিয়াঁজো কমিটির অন্যতম এই নেতা।
তবে শিগগিরই এক দফার ঘোষণার কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (৭ জুলাই) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছি আমরা। ৩৬টি দল একমত হয়েছি। এক দফার আন্দোলন কবে নাগাদ শুরু করা যায়, কবে ঘোষণা করা যায়, কীভাবে ঘোষণা করা যায়- এসব নিয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা হচ্ছে।’
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। কারণ, জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। জনগণ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে।’এ দিন নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসে গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। যেখানে বিএনপির পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
অন্যদিকে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী, মহাসচিব আবদুল কাদের প্রমুখ এতে উপস্থিত ছিলেন।