প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে শুক্রবার রাজধানীতে ফিরেছেন অসংখ্য মানুষ। তবে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত দ্বিতীয় দফার কঠোর বিধিনিষেধের কারণে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন। এ কারণে ঢাকায় এসেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে কর্মজীবী মানুষদের। বাস, ট্রেন ও লঞ্চ থেকে নেমে বাসায় যাওয়ার যানবাহন না পেয়ে বিপাকে পড়েন হাজারো মানুষ। বাধ্য হয়ে সঙ্গে থাকা ব্যাগ আর শিশুসন্তানকে নিয়ে অনেকে পায়ে হেঁটে যান গন্তব্যে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর সদরঘাট ও ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন গতকাল রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কই ছিল ফাঁকা। ঢাকামুখী মানুষ ছাড়া রাস্তায় লোকচলাচল ছিল না বললেই চলে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর টহল চোখে পড়ে। রাস্তায় যারা বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছিলেন তাদের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। সদুত্তর মিললেই যেতে পেরেছেন। তবে মূল সড়কে বিধিনিষেধ সর্বাত্মকভাবে মানতে দেখা গেলেও পাড়া-মহল্লায় চায়ের দোকানে চলেছে আড্ডা। বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক ছিল না।
জানা গেছে, আমিনবাজারে এসে যাত্রী নামিয়ে দেয় অনেক বাস। এ কারণে অনেক যাত্রী আমিনবাজার থেকে হেঁটে গাবতলী দিয়ে রাজধানীতে ঢুকছেন। সকাল থেকেই হেঁটে রাজধানীতে প্রবেশ করা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও লাগেজ কষ্ট করে টেনে নিতে হয়েছে নিজেদেরকেই। বরগুনা থেকে ঢাকায় এসেছেন আজাদ কবির। সঙ্গে তিনটি বড় ব্যাগ, স্ত্রী ও তিন মাস এবং চার বছরের দুই শিশু। বরগুনা থেকে ভালোভাবে ঢাকায় পৌঁছান লঞ্চে করে। কিন্তু সদরঘাটে নেমেই পড়েন বিপাকে। চেনা সদরঘাট যেন তার কাছে বড় অচেনা লাগে। অনেক চেষ্টা করেও একটি রিকশা ঠিক করতে পারেননি দক্ষিণখানের ভাড়া বাসায় যাওয়ার জন্য। তাই বাধ্য হয়ে শিশু সন্তান ও সঙ্গে থাকা ব্যাগ নিয়ে সদরঘাটের রাস্তায় বসে পড়েন।
বরগুনার আজাদ কবিরের মতো একই অবস্থা দেশের দক্ষিণের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে ফেরা মানুষের। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও মিলছে না একটি যানবাহন। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে হাঁটতে শুরু করেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। কেউ কিছু দূর হাঁটার পরে রাস্তায় বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। আর যাদের ভাগ্য ভালো, তারা দুই তিন গুণ ভাড়া বেশি দিয়ে রিকশা অথবা ভ্যানে করে ফেরেন নিজ নিজ গন্তব্যে। কেউ কেউ পিকআপ, অ্যাম্বুলেন্স নিয়েও গিয়েছেন নিজ নিজ ঠিকানায়। তবে অধিকাংশ মানুষ পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরতে বাধ্য হন।
জানতে চাইলে বরিশাল থেকে আসা যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘দক্ষিণবঙ্গের লঞ্চগুলো ভোর ৬টার পর ঢাকা পৌঁছাবে জেনেও প্রশাসন কেন সেগুলো ছাড়ার আগে বন্ধ করল না? যদি সেগুলো বন্ধ করে দিত, তাহলে আমরা লকডাউনে ঢাকায় আসতাম না এবং এই ভোগান্তির মধ্যে পড়তাম না।’
এদিকে সড়কে গাড়ি না থাকার সুযোগে কয়েক গুন ভাড়া বেশি চাচ্ছেন রিকশা ও ভ্যানচালকরা। তবুও বাড়তি ভাড়ায় মানুষ বাধ্য হয়ে উঠছেন। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর বাবু বাজারের নিচের নৌকা ঘাটে। নদীপথে চেকপোস্ট কিংবা পুলিশের কড়াকড়ি না থাকায় কয়েক গুণ বাড়তি ভাড়ায় রাজধানীর বসিলা ও গাবতলীতে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে ইনঞ্জিনচালিত ট্রলারগুলোকে। ৫০ টাকা ভাড়া কয়েক গুণ বাড়িয়ে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ করে নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধ আগামী ৫ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে। এবারের বিধিনিষেধ গতবারের চেয়ে কঠোর হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।