হুইপের সম্মতিতে টিকা বাণিজ্য ও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকা প্রদানের অভিযোগে অভিযুক্ত পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট রবিউল হোসেনকে ঘটনার তিন দিন পর সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. এ কে এম খুরশীদ আলম একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে জানান, টিকা নিয়ে এমন ঘটনা এর আগে ঘটেনি। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনিভাবে কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা পর্যালোচনা করা হবে। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে, জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমার কাছে এখনো চিঠি আসেনি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে এমন একটি খবর শুনতে পাচ্ছি।
এর আগে গতকাল হুইপ সামশুল হকের আর্শীবাদপুষ্ট মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট রবিউলের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেন।
এতে টিকা নিরাপত্তার ‘কোল্ড বক্স’ ছাড়াই টিকা স্থানান্তর, রেজিস্ট্রেশন কার্ড জালিয়াতিসহ সরকারি তদন্তে ধরা পড়েছে চট্টগ্রামের পটিয়ায় ‘হুইপ বাহিনীর’ করা টিকা বাণিজ্য। তবে উপজেলার সরকারি টিকা সংরক্ষণাগারের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ গায়েব হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিশ্বস্ত একটি সুত্র।
তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা জানান, অনুমতি ছাড়া ও যথাযথ নিয়ম না মেনে দেওয়া হয় ২৬শ’ টিকা। দুইদিনে দেওয়া ২৬শ’ টিকার উপস্থাপিত রেজিস্ট্রেশন কার্ডের মধ্যে অন্তত ২২শ’ কার্ডই ভুয়া। অনুমতি ছাড়াই এই টিকাদান প্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য সহকারীর মতোই হুইপ সামশুলের ভাই মহব্বত নিজেই টিকা পুশ করেছেন টিকা প্রত্যাশীদের।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, অনুমোদন না নিয়ে ও নিয়মবহির্ভূতভাবে পটিয়ার শোভনদন্ডী ইউনিয়নে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপির বাড়ি লাগোয়া একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে টিকাগুলো দেওয়া হয়। তদন্তকালে অভিযুক্ত হইপপোষ্য কথিত ছাত্রলীগ নেতা ও ইপিআই কর্মসূচির টেকনোলজিস্ট রবিউল হোসেন তদন্ত টিমকে মোট ২৬শ’ টিকার রেজিস্ট্রেশন কার্ড উপস্থাপন করেন। কার্ডগুলো সংশ্লিষ্ট বারকোড পরীক্ষা নিরক্ষায় ধরা পড়েছে ভিন্নতা। ২৬শ’ কার্ডের মধ্যে দুই শতাধিক কার্ড পুরনো রেজিস্ট্রেশনকৃত।
জানা যায়, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি এলাকার জনগণকে করোনার টিকা দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার পর তার নির্দেশনায় ৩০ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ড রশিদাবাদ আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ৩১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ড ও ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জনগণের জন্য শোভনদণ্ডী স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ আয়োজন করা হয়।
এই অবৈধ টিকদান কার্যক্রমকে সফল করতে ঘটা করে হুইপ ও নেতাকর্মীদের ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে প্রচারণা চালানো হয়।
টিকাদানের ঘটনায় অভিযুক্ত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) রবিউল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় হুইপ, চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যরা এ বিষয়ে অবগত ছিলেন। টিকা দেওয়ার বিষয়টি আমি সবাইকে জানিয়েছি। হুইপ মহোদয় এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথবলেন, টিকা দেওয়ার বিষয়ে সরকারি কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। ঘটনাটি জানার পর আসলেই টিকাদান করা হচ্ছে কিনা- তা যাচাই করতে সেখানে গিয়ে সত্যতা পেয়েছি। এ ঘটনার জন্য তাকে শোকজ করা হয় এবং দুই দিনের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণকৃত স্থিরচিত্রে দেখা যায়, রশিদাবাদ আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যকর্মীর ভূমিকায় সিরিঞ্জ হাতে হুইপের ভাই ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বত টিকাদান করছেন। প্রশিক্ষিতস্বাস্থ্যকর্মী কিংবা দায়িত্বশীল কেউ না হয়েও তিনি কিভাবে এই দায়িত্ব নিলেন- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।